আবু সাইদ হত্যা আসামি পুলিশের ৭ কর্মকর্তার খোঁজ মিলছে না
প্রকাশিতঃ ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
বিশেষ প্রতিনিধি,৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণ-অভুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাবার পর থেকে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশে কর্মরত ৭ উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ও এক রেজ্ঞ ডিআইজির কোন খোঁজ মিলছেনা। তাদের নামে বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদসহ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত ৬ হত্যাসহ ৩ থেকে ৫টি করে মামলা রয়েছে। দীর্ঘ ৫ মাসেও তাদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, দীর্ঘ দিনেও বেরোবি শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাইদ হত্যা মামলার আসামী পুরিশ সদস্যদের গ্রেফতারের দাবিতে বৃহসপতিবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিচিল মানব বন্ধন ও সমাবেশ করেছে। তারা অভিযোগ করেছে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে পালিয়ে গেলেও পুলিশ প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা তাদের দোসররা আসামী পুলিশ কর্মকর্তাদের ইচ্ছাকৃত ভাবে গ্রেফতার করছে না। তবে আমরা ৫ মাস অপেক্ষা করেছি এবার কঠোর আন্দোলনের মাদ্যমে পুরিশকে বাধ্য করা হবে।
মেট্রোপলিটান পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগষ্ট’র পর রংপুর রেজ্ঞের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন ও রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামানকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। কিন্তু তারা ৫ আগষ্টের পর তাদের রংপুরে জনসম্মুখে দেখা মেলেনি। এ ছাড়া রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের ডেপুটী কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, অতিরিক্ত ডেপুটী কমিশনার উৎপল কুমার পাল , রংপুর কোতয়ালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান , পশুরাম সার্কেলের সহকারী কমিশনার আল ইমরান হোসেন , রংপুর মেট্রোপলিটান তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম , রোকেয়া বিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ বিভুতি ভুষন রায়। এই ৫ পুলিশ কর্মকর্তা ৫ আগষ্টের পর আর রংপুরে তাদের কর্মস্থলে আর দেখা যায়নি। তারা কোথায় আছেন সে সম্পর্কে পুলিশের কোন কর্মকর্তাই জানেননা বলে জানিয়েছেন।
এদিকে, গত ১৮ আগষ্ট বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদকে পুলিশ গুলি করে হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৩০/৩৫ জন উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় পুলিশের আইজিপি আব্দুল্লা আল মামুন, রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান , রংপুর রেজ্ঞের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, ডেপুটী পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান ও আল ইমরান, তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভুতি ভুষন রায় এজাহার নামীয় আসামী। এদের মধ্যে পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লা আল মামুন ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন অন্য একটি মামলায় ।
নিহত আবু সাইদের বড় ভাই রমজান আলী তার দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করেন সাবেক আইজিপি আব্দুল্লা আল মামুন সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামানের নির্দ্দেশে ডেপুটী পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন এবং তাদের অন্যান্য উর্ধতন কতৃপক্ষের নির্দ্দেশে এবং প্ররোচনা ও উস্কানীতে সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান ও আল ইমরান হোসেন ও ওসি রবিউল হোসেনের নির্দ্দেশে বেরোবির গেটের সামনে কোন প্রকাল সতর্ক না করে মাত্র ২০/২৫ ফুট দুর থেকে পুলিশ কনষ্টবল সুজন চন্দ্র রায় এএসআই আমীর আলী তাদের শর্টগান দিয়ে নির্মম ও নৃশংস ভাবে গুলি করে হত্যা করেছে।
সাইদ হত্যা মামলা দায়ের হবার পর পরেই সব পুলিশ কর্মকর্তা গা ঢাকা দেয় এরপর তাদের আর কোন সন্ধান মেলেনি। তবে পুলিশ কনষ্টবল সুজন চন্দ্র ও এএস আই আমীর আলী নিজেরা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করলে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয় পিবিআই। আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মজ্ঞুর করেন। কিন্তু রিমান্ড শেষ হবার আগেই পিবিআই তাদের আসুস্থ বলে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করে। এ ঘটনায় বাদী পক্ষের প্রধান আইনজিবী শামীম আল মামুন এ্যাডভোকেট আসামীদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবান বন্দি গ্রহন করার পদক্ষেপ না নিয়ে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করাকে অগ্রহনযোগ্য বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে ৭ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রংপুরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলা কালে ১৯ জুলাই ৬ ছাত্র জনতা নিহত হবার ঘটনায় তাদের বিভিন্ন হত্যা মামলায় আসামী করা হয়। নিখোজ ৭ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৫ থেকে ৭টি করে হত্যা মামলা সহ গুলি করে আহত করার বেশ কয়েকটি করে মামলা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর আহবায়ক রহমত আলী বলেন, যার জন্য আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি সেই শহীদ আবু সাইদকে কিভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে সেই দৃশ্য দেশবাসি ও বিশ্ববাসি দেখেছে। আবু সাইদ হত্যা প্রত্যাক্ষ পুলিশী হত্যাকান্ড সেই হত্যাকান্ডে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা নির্দ্দেশ দান করেছে যারা প্রত্যাক্ষ ভাবে অংশ নিয়েছে তারা এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে। আমরা চাই অনতিবিলম্বে পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে । তিনি বলেন আমরা ছাত্র সমাজ আর আবু সাইদ হত্যা মামলায় কোন ধরনের শুভংকরে ফাঁকি দেখতে চাইনা। আমরা অনেক দিন অপেক্ষা করলাম এখন আমরা কঠোর থেকে কঠোরতম আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোসনা করে প্রশাসনকে বাধ্য করবো বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নিহত আবু সাইদের বড় ভাই রমজান আলী অভিযোগ করেন তার ভাই আবু সাইদ হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামী সাবেক তোন পুলিশ কর্মকর্তাকেই এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি দ্রæত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একই ভাবে নিহত শিক্ষার্থী আব্দুল্লা তাহির , ব্যবসায়ী মিলনের স্বজনরাও হত্যাকান্ডের নির্দ্দেশ দাতা ও গুলি করে হত্যাকারী পুলিশ কর্তাদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী জানান ৭ পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে পুলিশের সাবেক আইিিজপি আব্দুল্লা আল মামুন ও রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের সাবেক কমিশনার মনীরুজ্জামানকে বাধ্যতামুলক অবসর দিয়েছে সরকার। বাকী ৫ পুলিশ কর্মকর্তা ৫ আগষ্টেরে পর আর তাদের কাজে যোগদান করেননি। তারা পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। মামলাটি যেহেতু তদন্ত রংপুর পিবিআ্ই পুলিশ তারা ভালো বলতে পারবেন।
তবে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা পিবিআই রংপুরের পুলিশ সুপার জাকির হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।