ট্রেনে কাটা ৫ অজ্ঞাত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত
প্রকাশিতঃ ০৩ অক্টোবর, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক,নরসিংদীর রায়পুরায় ট্রেনে কাটা পড়া অজ্ঞাত ৫ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেছে রেলওয়ে পুলিশ। ঘটনার পর বিভিন্ন স্টেশনে ঘুরে ঘুরে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম।
গত ৮ জুলাই সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেট এলাকায় পলাশতলী ইউনিয়নের কমলপুরে রেল লাইনে ছিন্নবিচ্ছিন্ন ৫টি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা।
রেললাইনের ১৫ গজের মধ্য থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবস্থায় মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনেরই শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন ছিল, দুজনের শরীর দ্বিখণ্ডিত ছিল এবং এদের মধ্যে চারজনেরই হাত-পা বিচ্ছিন্ন ছিলো। খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ, পিবিআই, রায়পুরা ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল এসে মরদেহ উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। একই সঙ্গে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কাজ শুরু করেন। তবে নিহতদের সরঙ্গ কোন মানিব্যাগ, টাকা কিংবা মোবাইল পাওয়া যায়নি। এতে ঘটনাটি নিয়ে তদন্তকারীদের মধ্যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। তাই পুলিশ তাদের পরিচয় নিশ্চিতে কাজ শুরু করে।
নিহতরা হলো-সিলেটের কুমারপাড়া এলাকার আব্দুল্লাহ ওরফে সাব্বির (১৬), হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার হরেপুর গ্রামের আরিফ মিয়ার ছেলে রাব্বি (১৫), মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেলস্টেশন এলাকার সিয়াম (১৪), ময়মনসিংহ বাসস্ট্যান্ড এলাকার আলআমিন (১২) এবং সেলিম (২৫)। নিহতরা সবাই টোকাই এবং ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতো।
রেলওয়ে পুলিশ জানায়, নিহতরা কমলাপুর রেলস্টেশন ও খিলগাঁও তালতলা বস্তিতে থাকতো। তারা ভিক্ষা, বোতল টোকানো ও কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনে পানি ভর্তির কাজে সহায়তা করে জীবিকা নির্বাহ করতো। গত ৭ জুলাই রাতে সাব্বির, রাব্বি, সেলিম, আল-আমিন, সিয়াম ও ফয়েজুর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে আখাউড়া স্টেশনে যায়। পথে ফয়েজুর নরসিংদী স্টেশনে নেমে যায়। রাত একটার দিকে পাঁচজন আখাউড়া থেকে ঢাকাগামী নোয়াখালী এক্সপ্রেসে গাঁজা খেয়ে ছাদে উঠে। নেশা জাতীয় ডেন্ডি পলিথিনের ভেতর ঢুকিয়ে নেশা করতে থাকে। ট্রেনটি মেথিকান্দা রেলস্টেশন পার হওয়ার সময় ছাদ থেকে তাদের একজন পড়ে যাচ্ছিল এমন সময় রাব্বি তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু সে টেনে না তুলতে পারলে সবাই তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করার সময় ছাদ থেকে পাঁচজনই চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে গিয়ে মারা যায়। এ সময় ছাদে থাকা টোকাই আরিফুল সবকিছু দেখতে পায়। পরে সে তার বাড়ি খিলগাঁও তালতলাতে চলে যায়। পরে সে তার সঙ্গে থাকা টোকাইদের বিষয়টি জানায়। পরে নিহতদের পরিচিত টোকাই রিফাত তাদের শনাক্ত করে।
এ ঘটনায় রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দা স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আশরাফ আলী বাদী হয় ভৈরব রেলওয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন।
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর পিবিআই হাতের ছাপ সংগ্রহ করলেও তদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। ধারণা করা হয় তাদের কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। পরে রেলওয়ের বিভিন্ন থানায় ছবি পাঠিয়ে আমরা কোনো সাড়া পাইনি। তাদের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।
পরে রেলওয়ে পুলিশ টঙ্গী রেলস্টেশনে দোকানদার, হকার, টোকাইসহ ভাসমান সবাইকে ছবি দেখানো হয়। ব্যাপক খোঁজাখুঁজির পর নিহতদের পরিচয় ও ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়। মারা যাওয়ার আগে তারা ট্রেনের ছাদে বসে নেশা করছিল। পরে ট্রেনটি মেথিকান্দা অতিক্রম করার সময় একজন ছাদ থেকে পড়ে যাচ্ছিল, তাকে বাঁচাতে গিয়েই পাঁচজন একসঙ্গে নিচে পড়ে মারা গেছে। এ ঘটনায় আমরা এখনো ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট পাইনি। এগুলোর রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।