মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ভুয়া সমন্বয়ক পরিচয়ে পুলিশকে হয়রানি

প্রকাশিতঃ ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  

সোনার বাংলা ৭১ রিপোর্ট,রাজশাহীতে ভুয়া শিক্ষার্থী কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একের পর এক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী পরিচয় দিয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) এক এসআইর বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। এমন অভিযোগে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলিও করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত বুধবার শিক্ষার্থী পরিচয়ে রাজশাহী নগরীর আসাম কলোনি এলাকার এক বাড়িতে হামলা চালিয়ে দরজা ভেঙে দুই গৃহবধূকে প্রকাশ্যে রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে শিক্ষার্থী পরিচয়ে নির্যাতনকারীরা পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাতে ভুক্তভোগী গৃহবধূ শাপলার স্বামী রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এজাহারে তার স্ত্রী আকলিমা খাতুন ওরফে শাপলা (৩২) ও তার ছোট ভাই মিজানুর রহমানের স্ত্রী শারমিন আক্তারকে (৩১) বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় আসাম কলোনির বাসিন্দা শাহিন, তার স্ত্রী সাহিদা বেগম (৪২), ১৬ বছরের এক কিশোরী এবং স্থানীয় বাসিন্দা মনিরের মেয়ে মুক্তার (৩৫) নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্র পরিচয়ে যারা হামলা করতে আসেন তাদের অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

চন্দ্রিমা থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, যারা দুই গৃহবধূকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছে তারা কেউ এই এলাকার নয়। তাই তাদের পরিচয় এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আর এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তারে গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাতেও অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু আসামিরা পলাতক থাকায় কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে রজাশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ফাহিম রেজার পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি সিটিএসবির এসআই (নিরস্ত্র) মো. আব্দুল মোমেন প্রামাণিকের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, এসআই (নিরস্ত্র) আব্দুল মোমেন প্রামাণিক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভয় দেখিয়ে সুবিধা আদায়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি মাসুম হাবিবকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো, একই এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের পরিচয় ব্যবহার করে পদোন্নতি পাওয়াসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার এসআই (নিরস্ত্র) আব্দুল মোমেন প্রামাণিককে পুলিশ সদর দপ্তরে এপিবিএনে বদলিও করা হয়েছে।

তবে রাবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফাহিম রেজা পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কখনোই করেননি। এ বিষয়ে ফাহিম রেজা জানান, তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে চেনেন না। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও করেননি। বিষয়টি জানার পর গত শনিবার (৩১ আগস্ট) নগরীর মতিহার থানায় একটি জিডি করেছেন।

ওই জিডিতে ফাহিম রেজা বলেছেন, ‘আমার নাম ব্যবহার করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিএসবির এসআই (নিরস্ত্র) মো. আব্দুল মোমেন প্রামাণিকের চরিত্র হনন করার জন্য কোনো অসাধু ব্যক্তি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট তাকে এপিবিএনে বদলি করে। আমি মো. আব্দুল মোমেন প্রামাণিককে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। আমি তার বদলির জন্য কোনো অভিযোগ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নিকট করিনি। কে বা কারা আমার নাম ভাঙিয়ে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছে’। যারা এই মিথ্যা অভিযোগ দাখিলের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য তিনি জিডিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী এসআই আব্দুল মোমেন প্রামাণিক বলেন, আমি সবসময় সততার সঙ্গে চাকরি করেছি। কখনো অসৎ উপায়ে একটি পয়সাও উপার্জনের চেষ্টা করেননি। আর মাত্র সাড়ে তিন বছর চাকরি রয়েছে। এ সময় তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। এর সবই সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমি এ থেকে পরিত্রাণ চাই।

নগরীর মতিহার থানার ওসি আরিফুল ইসলাম বলেন, রাবি সমন্বয়ক ফাহিম রেজা থানায় একটি ডিজি করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।

আরএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. জামিরুল ইসলাম জানান, ওই অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক বলে আব্দুল মোমিন বদলি আদেশ বাতিল করার জন্য একটি আবেদন করেছেন। সেই আবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।