বুধবার ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

দোকান গুঁড়িয়ে-লুটপাট, প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পরও ১১ দিনেও মামলা রেকর্ড হয়নি

প্রকাশিতঃ ২৮ আগস্ট, ২০২৪  

বিশেষ ,প্রতিবেদকঃ ফরিদগঞ্জের লতিফগঞ্জ বাজারে বেআইনিভাবে দুটি দোকানঘর গুঁড়িয়ে দেয়ার ও লুটের ১১ দিন পরও মামলা নেয়নি পুলিশ।দোকান মালিক মহিম মোল্লা গত বিকালে কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঘটনার বর্ণনা দেন। বাজারের সমস্ত বাতি নিভিয়ে ১১ই আগস্ট দিবাগত গভীর রাতে দোকান ভাঙা শুরু হয়।শনিবার দুপুরের মধ্যে ভাঙন সম্পন্ন হয়। ভাঙার আগে দোকানের মালামাল লুট করা হয় বলে তিনি দাবি করেছেন।

শনিবার দুপুরে থানায় মামলা দেয়ার পর উপরন্তু দোকান ঘরের ছাদের রড ও কলামসহ সম্পর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সরকারি খাল দখল করে ব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।পুলিশের মৌখিক নির্দেশ মানেনি দুর্বৃত্তরা। 
সরজমিন জানা গেছে, বাজারের দক্ষিণ পাশের খালপাড়ে মহিম মোল্লা (৫৫) দুটি পাকা দোকানঘরের মালিক। বাজারের সকল বাতি অফ করে ও ভেঙে অন্ধকার সৃষ্টি করা হয়। এরপর, দুটি দোকানঘর ভাঙন শুরু হয়।

কয়েকটি দোকানের লোক ঘটনা প্রত্যক্ষ ও ভাঙনে অংশ নেয়া লোকদের দেখেন। দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিলেন। এর ফলে, ভয়ে কেউ এগিয়ে যাননি। খবর পেয়ে মহিম মোল্লা, তার স্ত্রী, ভাই ও ছেলেসহ কয়েকজন এগিয়ে যান। পথে তাদের দেখে বাধা দেয়া হয়। মহিম মোল্লা দাবি করেন, বাধাদানকারীরা অশালীন আচরণসহ তাকে, স্ত্রী, ভাই ও ছেলেকে মারধর করে, পকেটে থাকা প্রায় ১৫ হাজার টাকা নিয়ে, তাদেরকে দড়ি দ্বারা বেঁধে রাস্তায় ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা। কয়েকজন ব্যক্তি তাদের বাঁধন খুলে বাড়িতে পাঠায়। তিনি দাবি করেন, লতিফগঞ্জ মাদ্রাসার দলিল অনুযায়ী জনৈক দুলালের কাছ থেকে দোকানঘর ক্রয় করেছেন। ইতিপূর্বে, এরূপ নানা বিড়ম্বনায় পড়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করলে তিনি ডিক্রি পান।দোকানঘর ভাঙার হুকুম ও নেতৃত্ব দেন পার্শ্ববর্তী রামগঞ্জ উপজেলার জাসদ কপ থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি গোফরান, রফিক মোস্তান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অলিউল্লা, কামাল হোসেন, বিল্লাল, ফরিদগঞ্জ সীমানার কামরুল মোল্লা, জসিম মাওলানা প্রমুখ।

ভাঙনে প্রায় দেড় শত লোক অংশ নেয়। মহিম মোল্লা দোকানঘরের দখলসহ সমস্ত ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। 
দোকানঘর ভাঙার ঘটনা স্বীকার করে রফিক উল্লা মোস্তান (৩৫) বলেন, ওই জমি ও দোকানঘরের মালিক এমপি গোফরান, জসিম মাওলানা গং। তারা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিধি মোতাবেক ক্রয় করে নিয়েছেন। বিএস খতিয়ান অনুযায়ী খাল ও খালপাড়ের জমির মালিক সরকার। মাদ্রাসা বিক্রি করে কীভাবে। তিনি বলেন, মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া দলিল করে দিয়েছেন।

অন্যের ভোগ দখলীয় পাকাঘর ভাঙতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মালিকানা অনুযায়ী আমরা ঘর ভেঙেছি। সরকারি খালের উপর ব্রিজ নির্মাণের প্রশ্নে বলেন, চাঁদপুর পা.উ.বো. আমাদেরকে অনুমতি দিয়েছে। মুঠোফোনে, রফিক উল্লাহ মোস্তানের বক্তব্যের সম্মতি প্রদান করেছেন সাবেক এমপি গোফরান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওই দোকানের পেছনে প্রায় দুই একর জমিতে নার্সিং, কারিগরি ইনস্টিউট, কলেজ ও মার্কেট নির্মাণ করা হবে। 
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েক ব্যক্তি বলেছেন, গভীর রাতে বিকট আওয়াজে আমরা ভয় পেয়ে যাই। নীরবে, বের হয়ে দেখেছি রফিক উল্লা ও তাদের সহযোগী কেউ দোকান ভাঙছে, কেউ দেশীয় অস্ত্র হাতে বাজারে মহড়া দিচ্ছে। 
এ বিষয়ে, গতকাল মঙ্গলবার বিকালে মুঠোফোনে কথা হয় ফরিদগঞ্জ উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা এ.এন.এম জাহিদ হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ওই জমি সরকারি সম্পত্তি হলে কাউকে তসরুপ করতে দেয়া হবে না। সরকারি সম্পত্তিতে ব্রিজ করা দূরের কথা দখল করতেই পারে না। আমরা তদন্ত ক্রমে দ্রুতই তাদের উচ্ছেদ করবো। 


এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)মো. হানিফ সরকার বলেন, শনিবার বিকালে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। পাকা দুটি দোকানঘর ভাঙার চিত্র ও প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা এখনো রেকর্ড হয়নি। মামলা করতে বাধা কোথায়। এমন প্রশ্নে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।