গ্রাম পুলিশের বেতন-ভাতা বকেয়া কোটি টাকা
প্রকাশিতঃ ১৭ আগস্ট, ২০২৪
অনলাইন ডেস্ক: ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার ৯১ জন গ্রাম পুলিশের কোটি টাকার ওপরে বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। মাথাপিছু প্রতি সদস্যের বকেয়া পাওনা লাখ টাকা।
নিজেদের পরিশ্রমের উপার্জন যথাযথভাবে বুঝে না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের। তাদের অধিকাংশই ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের দরজায় বারবার কড়া নাড়লেও মেলেনি সুফল। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রাম পুলিশের শখানেক সদস্য।
ধর্মপাশা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৫৬ জন ও মধ্যনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ৩৫ জন গ্রাম পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন। গ্রাম পুলিশের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) অংশের বেতন-ভাতা এবং থানায় হাজিরার জন্য যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা সাধারণত সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় হতে প্রাপ্ত স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১ শতাংশ আয় হতে পরিশোধ করা হয়। সরকারি অংশ থেকেও ইউপি অংশের সমপরিমাণ বেতন-ভাতা ও উৎসব ভাতা প্রদান করা হয়। নিয়ম অনুসারে ইউপি অংশ পরিশোধের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১ শতাংশ হতে সংকুলান না হলে হাটবাজার ইজারা আয়ের ৪১ শতাংশ হতে তাদের পাওনা দেওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে। তবে সেসব নিয়ম যথাযথভাবে মেনে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়নি।
সূত্র অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্মপাশায় একেকজন গ্রাম পুলিশের ১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে ইউপি অংশের ১১ মাসের বেতন-ভাতা ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকা, এক মাসের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা ৩ হাজার ২৫০ টাকা, দুটি উৎসব ভাতা ৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং থানায় ৬০ মাসের যাতায়াত ও দৈনিক হাজিরা ভাতা ৭২ হাজার টাকা।
অন্যদিকে মধ্যনগরে একেকজন গ্রাম পুলিশ সদস্যের ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৫০ টাকা বকেয়া। এর মধ্যে ইউপি অংশের ১৯ মাসের বেতন-ভাতা ৬১ হাজার ৭৫০ টাকা, ২ মাসের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা ৬ হাজার ৫০০ টাকা, উৎসব ভাতা ৯ হাজার ৭৫০ টাকা এবং থানায় ৪৩ মাসের যাতায়াত ও দৈনিক হাজিরা ভাতা ৫১ হাজার ৬০০ টাকা।
সেই হিসাবে ধর্মপাশায় ৫৬ জনের ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ও মধ্যনগরে ৩৫ জনের ৪৫ লাখ ২৭ হাজার ২৫০ টাকাসহ মোট ১ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার ২৫০ টাকা বকেয়া রয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার ধর্মপাশার গ্রাম পুলিশদের ইউপি অংশের এক মাসের, সরকারি অংশের এক মাসের ও একটি উৎসব ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন।
বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্য আশিক মিয়া জানান, লাখ টাকার ওপরে বেতন-ভাতা বকেয়া থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন পরিবার নিয়ে। সংসার চালাতে ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে চাপা পড়েছেন ঋণের বোঝায়। পাওনাদারদের টাকা সময়মতো পরিশোধও করতে পারছেন না। অধিকাংশ গ্রাম পুলিশ সদস্যেরই তাঁর মতো অবস্থা।
মধ্যনগর ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জীব রঞ্জন তালুকদার টিটু জানান, বেতন-ভাতা বকেয়া থাকায় গ্রাম পুলিশের সদস্যরা কষ্টে আছেন। তাদের বেতন পরিশোধের জন্য সমন্বয় সভায়ও বিষয়টি একাধিকবার উত্থাপন করা হয়েছে।
সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন বলেন, সময়মতো বেতন-ভাতা না পেলে কাজের আগ্রহ কমে যায়। তবুও গ্রাম পুলিশ সদস্যরা স্থানীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রুত তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যবস্থা করা উচিত।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের আয়ের ওপর গ্রাম পুলিশের বেতন-ভাতা নির্ভর করে। আয় কম হওয়ায় বকেয়া জমেছে। সরকারি অংশের বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করা হবে।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন জানান, রাজস্ব খাতে পর্যাপ্ত আয় না হওয়ার কারণে ইউপি খাতের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবুও বৃস্পতিবার কিছু বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি বকেয়া পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।