বৃহস্পতিবার ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সড়কে মৃত্যু ফাঁদ  ‘দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস সংশ্লিষ্টদের’

প্রকাশিতঃ ০৯ জুলাই, ২০২৪  

অনলাইন ডেস্ক: নোয়াখালী সোনাইমুড়ী পৌরসভার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক। সড়কের মাঝে ছোট, বড় খানা-খন্দ। ঘোলা পানিতে সেগুলো ভরে থাকায় গভীরতা বোঝার উপায় নেই। কোথাও কোথাও পানি থই থই ডোবার মাঝে চরের মত জেগে উঠেছে পিচের ঢালাই। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ব্যাটারি চালিত রিক্সা-সিএনজি-মোটরসাইকেল। রাস্তার খাদে পড়ে ব্যাটারি চালিত রিক্সা-সিএনজি উল্টে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটছে প্রায়শই। আধা কিলোমিটার রাস্তা যেন পরিনত হয়েছে মৃত্যু ফাঁদে।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কের সোনাইমুড়ী কলেজে গেট থেকে রৌশনারা কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত রাস্তার বেহালদশা গত তিন বছর থেকে। সড়কটি সোনাইমুড়ী পৌরসভার দুই ও চার নং ওয়ার্ডের মধ্যদিয়ে চলে গেছে মুহুরীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি সড়কটি এলজিইডি আওতাধীন। অন্যদিকে উপজেলার এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের) প্রকৌশলী বলছেন সড়কটির সোনাইমুড়ী কলেজ থেকে অন্ধকল্যাণ সমিতি চক্ষু হাসপাতাল পর্যন্ত পৌরসভার আওতাধীন।

জানা যায়, ১৯৯৫ সালের দিকে সোনাইমুড়ী ছিলো বেগমগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। পরে ২০০৫ সালে উপজেলা ও ২০০৮ সালে সোনাইমুড়ী পৌরসভা গঠিত হয়। ২০১০ সালের দিকে এই সড়কটির কার্পেটিং করা হয়। গত পাঁচ বছর পূর্বে সংস্কার কাজ করে এলজিইডি বিভাগ। এর পরে আর সংস্কার হয়নি। গত ইদূল আজহার পূর্বে পৌরসভার পক্ষ থেকে সড়কের গর্তগুলোতে কিছু ইটের খোয়া ফেলা হয়েছিলো।

দেখা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কটি সোনাইমুড়ী কলেজ গেট থেকে কালুয়াই, মুহরীগঞ্জ, নান্দিয়াপাড়া, দেওটি ও কড়িহাটি ইউনিয়নকে যুক্ত করেছে। এসকল ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ এই সড়কের মাধ্যমেই সোনাইমুড়ী হয়ে মাইজদী-ঢাকা-কুমিল্লায় যাতায়াত করেন। ইউনিয়ন সমূহের বিভিন্ন হাসপাতালের রোগী পরিবহনেও এই সড়কটিই একমাত্র ভরসা। এছাড়া বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সড়কটির দুই পাশে। এর মধ্যে সোনাইমুড়ী ডিগ্রি কলেজ, সোনাইমুড়ী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল, ক্বারী রমজান আলী মাদ্রাসা, লাইফ সাইন স্কুল, লাইফ সাইন ইসলামিক একাডেমি, ইস্টার্ন কলেজের কয়েকশো শিক্ষার্থীদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সমাগম থাকে এই সড়কে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দায়িত্বে থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ সড়কটি সংস্কার করেনা। মাঝে মধ্যে সড়কের গর্তগুলোতে যেনতেন করে ইটের খোয়া ফেলে দায়সারে। আর সেসব খোয়া রোলিং করে সমান না করায় জনদুর্ভোগের সাথে বাড়ে দূর্ঘটনা। বড় বড় গর্তের কারণে পুরো সড়কটির এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হওয়ার পরও দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও এই সড়কের পাশের মুদি দোকানি আকরাম হোসেন জানান, তিনবছর থেকে রাস্তাটি নষ্ট হতে শুরু হয়। প্রতি বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় পানি আটকে থেকে খানাখন্দ বেড়েছে। জুন মাসের বৃষ্টির পর থেকে এই রাস্তায় দূর্ঘটনাও বেড়েছে। কিছুদিন পূর্বে লাইফ সাইন স্কুলের সামনের গর্তে একটি মিশুক উল্টে যায়। একজন মহিলা যাত্রী গুরুতর আহত হন। এছাড়া প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা হয়।

সিএনজি চালক ফরহাদ হোসেন বলেন, কলেজ গেট থেকে রৌশনারা কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে উল্টে যায় অটোরিকশা। ভাঙ্গাচোরা রাস্তার কারনে নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। বিভিন্ন এলাকার রোগীরদের এই রাস্তা দিয়ে সোনাইমুড়ীতে নিয়ে যেতে হয়। ভাঙাচোরা রাস্তার ঝাঁকিতে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়।

সোনাইমুড়ী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল আজম জানান, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কটি এলজিইডির আওতাধীন। সাড়ে তিন কিলোমিটার এই সড়কটি বর্ধিতকরণ ও সংস্কারে স্কিম হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের শেষেই কাজ শুরু হবে। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি প্রশস্ত করা হবে। বর্তমানে সড়কটি ১২ ফুট রয়েছে প্রশস্ত হয়ে ১৮ ফুট হবে।

জনদুর্ভোগ ও রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে পৌর মেয়র নুরুল হক চৌধুরী জানান, দ্রুতই সড়কের কাজ শুরু হবে। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কটির সোনাইমুড়ী কলেজ গেট থেকে রৌশনারা কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই যায়গায় আরসিসি ঢালাই দেওয়া হবে। প্রায় ২০ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ হচ্ছে রাস্তাটির জন্য।

রাস্তাটি বেহাল দশার বিষয়ে প্রশ্ন করলে উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মোঃ এমদাদুল হক জানান, সড়কটি সোনাইমুড়ী কলেজ থেকে মুহুরীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত। গত পাঁচ বছর পূর্বে সংস্কারের কাজ করা হয়েছে, সড়কে কোন সমস্যা নেই। রাস্তাটি কলেজের সামনে থেকে অন্ধ কল্যান সমিতি হাসপাতাল পর্যন্ত অংশটুকু পৌরসভার আওতাধীন তাই সংস্কারের দায়িত্ব পৌরসভার।

তিনি আরো বলেন, দুই মাস পূর্বে চট্টগ্রাম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলার ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্ত করন প্রকল্পের আওতায় রাস্তাটির জন্য ২০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছ। সোনাইমুড়ী কলেজ থেকে মুহুরিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কারসহ ১৮ ফিট প্রশস্ত হবে। বিষয়টি অনুমোদনের জন্য প্রকৃয়াধীন রয়েছে।