মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধভাবে বালু বিক্রির হিড়িক,সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব

প্রকাশিতঃ ১৪ মে, ২০২৪  

অপরাধ প্রতিবেদক,মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় ডানকান ব্রাদার্স পরিচালিত আলীনগরের ফাঁড়ি সুনছড়া ও কামারছড়া চা বাগান থেকে অবৈধভাবে বালু বিক্রির মহোৎসব চলছে। ছড়া ও ছড়ার পার্শ্ববর্তী চায়ের টিলা খুঁড়ে প্রতিনিয়ত সিলিকা বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়মিতভাবে এসব বালু ট্রাকে পরিবহন করা হচ্ছে বাগানের ভেতর দিয়েই। এতে নষ্ট হচ্ছে বাগানের গাছ ও পরিবেশ। সেই সঙ্গে স্থানীয় রাস্তা, চায়ের টিলা, ছড়া ও কালভার্টে ভাঙনসহ নানামুখী সমস্যা দেখা দিয়েছে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চা বাগান কর্তৃপক্ষ এর আগে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে চা বাগানের পক্ষ থেকে আদালতে মামলাও করা হয়েছে।
বাগান দুটিতে গিয়ে দেখা যায়, সুনছড়া ও কামারছড়া দুটি বাগানের ভেতর থেকেই বালু তোলা হচ্ছে। বাগানের বিভিন্ন স্থান থেকে মূলত সংগ্রহ করা হচ্ছে সিলিকা বালু, যা পরবর্তী সময়ে ট্রাকে করে পরিবহন করা হচ্ছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলছে এই বালু তোলার তাণ্ডব। তাদের মাধ্যমেই বাগান ও ছড়া থেকে বালু তোলা ও তা বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির পুরো প্রক্রিয়া চলমান। এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চায়ের টিলা, বাগানের রাস্তা, দুই চা বাগানের মধ্যবর্তী লোহার কালভার্ট ও সম্ভাবনাময় খনিজ সম্পদের উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া চা বাগানের উত্তোলিত চা পাতা পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট পর্যায়গুলোকে ম্যানেজ করেই এই প্রক্রিয়া চলমান।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়ে এরই মধ্যে আলীনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক হাবিব আহমেদ চৌধুরী মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর দুই দফা লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, সুনছড়া ও রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের মধ্যবর্তী ছড়া বালু মহাল হিসেবে লিজভুক্ত না হলেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যাপক হারে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ট্রাক চলাচলের কারণে চা বাগানের রাস্তাঘাট চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে বাগানের চা পাতা পরিবহন ও অন্য্যান্য দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এবং চা বাগানের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে বাগানের শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এতে আরও বলা হয়, বালু উত্তোলনের স্থানের ছড়া ভাঙনের ফলে চা সেকশনগুলোতে ভূমিধস দেখা দিয়েছে।  

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জুন প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত ৫১টি পাহাড়ি ছড়া সিলিকাবালু সম্পৃক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১৯ টিকে অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। ইজারাগ্রহীতাদের অনিয়ন্ত্রিত ও বেআইনিভাবে বালু উত্তোলনের ফলে কমলগঞ্জসহ জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিপর্যয় ঘটছে।

এ ব্যাপারে ২০১৬ সনের ৮ মার্চ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করে। শুনানি শেষে ২১ মার্চ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ১৯টি বালুমহালকে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) ও পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইসিসি) ছাড়া পরবর্তী ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেন। 
প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল এর পরও অবৈধভাবে বালু উত্তলন অব্যাহত রেখেছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বন বিভাগের লোকজনও ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোকেরা লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও এর স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, সুনছড়া থেকে ইজারা ছাড়া অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন এখান থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার সিলিকা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়। এ বালুর বাজার মূল্য অনেক বেশি। এভাবে বালু উত্তোলনের কারণে পরিবেশ ও রাস্তার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনসহ স্থানীয়রাও নীরব ভূমিকা পালন করছে।