মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

নৌকার পক্ষে কাজ না করলে দুই চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি ওসির

প্রকাশিতঃ ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩  

স্টাফরিপোর্টার: ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘনসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে।

এই ঘটনায় ভোক্তভোগী ট্রাক প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবিএম আনিছুজ্জামান গত ২০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) ট্রাক প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবিএম আনিছুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

একই সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ নির্বাচন কমিশনার বরাবর দেয়া অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) সংসদ সদস্য প্রার্থী এবিএম আনিছুজ্জামান উল্লেখ্য করেন, সম্প্রতি উপজেলার ২ নম্বর বৈলর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মশিউর রহমান শাহানশাহ ও ১ নম্বর ধানীখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ সোহেল আহাম্মদকে থানায় ডেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাফেজ রুহুল আমীন মাদানীর পক্ষে নির্বাচন করার নির্দেশ প্রদান করেন। তা না হলে তাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করা হবে বলে হুমকি দেন থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন। একই সাথে তার নির্দেশে ধানীখোলা ইউনিয়নের বিট অফিসার এসআই আমিনুল ইসলাম ধানীখোলা ইউনিয়নের ভোটারদেরকে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিলে গ্রেফতার জেলে ঢুকানোর হুমকি দিয়ে আসছেন।

এবিষয়ে ধানীখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ সোহেল বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর আমার এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠে একজন লোক মারা যায়। “বিষয়টি খোঁজ নিতে থানায় গেলে ওসি কামাল হোসেন আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনি কার নির্বাচন করছেন। চেয়ারম্যান জানান, এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। তখন ওসি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। আপনাকে দুই দিনের সময় দিলাম, ভেবে আমাকে জানাবেন।”

বৈলর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শাহানশাহ বলেন, “গত ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর একটি মামলার বিষয়ে জানতে ওসি সাহেবের সাথে দেখা করতে যাই। সেখানে গেলে ওসি বলেন, আপনি তো স্বতন্ত্রপ্রার্থীর পক্ষের কাজ করছেন। তা করা যাবে না, আপনাকে বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী রুহুল আমিন মাদানীর পক্ষে কাজ করতে হবে। যদি তা না করেন, তাহলে সমস্যায় পড়বেন। এই কথা শুনে আমি থানা থেকে বের হয়ে চলে আসি।”

স্বতন্ত্রপ্রার্থী এবিএম আনিছুজ্জামান বলেন, “নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন ও আমার সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। তবে, এবিষয়ে আপডেট কোন খবর নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়নি।”

ত্রিশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি অফিসিয়ালি কেউ আমাকে জানায়নি। তবে, অন্য মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। এমন অভিযোগ সম্পুর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা। কারণ, গত ১৫ দিনে আমি তিন দিন ওই ইউনিয়নে গিয়েছি। আমার কারোর সাথে নৌকায় ভোট দেয়া বা নির্বাচনের বিষয়ে কোন কথা হয়নি। প্রয়োজনে আপনি (প্রতিবেদক) ঘটনাস্থলে গিয়ে যাচাই করে দেখতে পারেন। যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে এমন কথা বলে, তাহলে আমি যে কোন শাস্তি মেনে নেব।”

ত্রিশাল থানার ভার প্রারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি কাউকে কোন প্রকার হুমকি বা মামলার ভয় দেখায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। যেহেতু, অভিযোগ নির্বাচন কমিশনার বরাবর দেয়া হয়েছে। সেহেতু, নির্বাচন কমিশনার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।

এবিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, যেহেতু, নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়। সেখান থেকে বিষয়টি দেখবেন।