মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কি কি ঘাটতি ছিল তা শনাক্তে কাজ করছি: ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার

প্রকাশিতঃ ০৪ জুলাই, ২০২৩  

জেলা প্রতিনিধি:ঝালকাঠিতে তেলবাহী জাহাজে যে বিস্ফোরণ হয়েছে, আর যেন কোনো নৌযানে সেটা না ঘটে সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

আজ মঙ্গলবার (৪ জুলাই) দুর্ঘটনাকবলিত সাগর নন্দিনী-২ জাহাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। 

খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কি কি ঘাটতি ছিল তা শনাক্তে কাজ করছি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রতিরোধমূলক সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আন্তঃমন্ত্রণালয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের করা পৃথক কমিটিগুলো কাজ শেষ করলে ওই কমিটি কাজ শুরু করবে। আমাদের লক্ষ্য যে কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে সেগুলো চিহ্নিত করা। জাহাজগুলোতে ফায়ার ফাইটিং সরঞ্জাম, ইনস্যুরেন্স ছিল কিনা তা দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পদ্মা অয়েল লিমিটেডের নিজস্ব ট্যাংকার নেই। তারা আমাদের নিবন্ধিত ট্যাংকার দিয়ে তেল আনা নেওয়া করে। ১ জুলাই সাগর নন্দিনী-২ নামক তেলবাহী জাহাজটির ইঞ্জিনরুমে যখন আগুন লাগে, তখন আরেকটি জাহাজ দিয়ে আমরা তেলগুলো উত্তোলনের কার্যক্রম অবিলম্বে গ্রহণ করি। তবে ডিজেলের থেকে পেট্রোল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রথমে আমরা জাহাজটিতে থাকা ৭ লাখ লিটার ডিজেল সরানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ৭ লাখ ডিজেল উত্তোলনের পর ৪ লাখ লিটার পেট্রোল উত্তোলনের চিন্তা করা হয়। তবে গরমের কারণে সোমবার সকালে পেট্রোল উত্তোলন করা হয়নি। পরে পেট্রোল উত্তোলন শুরু হলে একপর্যায়ে বিস্ফোরণ ঘটে। এ কারণে ২৫ হাজার লিটার পেট্রোল উত্তোলন করা সম্ভব হলেও বাকিটা জাহাজে থেকে যায়।  আর এখন আমাদের ধারনা আগুনের কারণে পেট্রোল যেটুকু ছিল তার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে।

খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঝালকাঠিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, পরিবেশ অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করেছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আর ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজের তেলটা কীভাবে আরেকটা বিস্ফোরণের ঘটনা না ঘটিয়ে নিরাপদে ডিপোতে স্থানান্তর করা যায় সেই চিন্তা আমরা করছি।

তিনি বলেন, ঝালকাঠিতে নদী ফায়ার স্টেশন করার প্রয়োজনীয়তা আছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটির তদন্তের রিপোর্টে আসলে আমরা নদী ফায়ার স্টেশনের সুপারিশ করবো। একইসাথে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটির তদন্তের রিপোর্টের পর দুর্ঘটনার নেপথ্যে কারো দায়িত্বহীনতা থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকরা হবে। 

আন্তঃমন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২) ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মোহা. নায়েব আলীকে প্রধান করা হয়েছে। যেখানে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরবর্তী কার্যক্রমে যে সকল এজেন্সি কাজ করেছে তাদের একজন করে প্রতিনিধি থাকবে এবং ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান সচিব।

এর আগে কলেজ খেয়াঘাট থেকে স্পিডবোটযোগে ঘটনাস্থলে যান খায়েরুজ্জামান মজুমদার। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল খালেক মল্লিক, ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম, নৌ পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন, ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল। এছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত শনিবার (১ জুলাই) সুগন্ধা নদীতে নোঙর করা সাগর নন্দিনী-২ জাহাজের ইঞ্জিনরুমে বিস্ফোরণে চারজন নিহত ও পাঁচজন দগ্ধ হন। সেই উদ্ধার অভিযান শেষ করে তেল অপসারণের সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় আবারও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৪ জন দগ্ধ হয়েছেন। দুই দফায় বিস্ফোরণে এই জাহাজে ১৯ জন দগ্ধ এবং চারজন নিহত হন। আগুন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয়ে পরের দিন ভোররাত সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জ্বলে।