দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে জুতাপেটার অভিযোগে দুই নারী গ্রেফতার
প্রকাশিতঃ ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
বিশেষ ,প্রতিবেদকঃ কুষ্টিয়ায় লেবেল ক্রসিংয়ে সৃষ্ট জ্যামে আটকে থাকা রিকশা আরোহী দুই নারী যাত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে নিজের পায়ের জুতা খুলে মারধর করেছেন। এ অভিযোগে দুই নারীকে আটক করেছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ।
সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের প্রাণকেন্দ্র কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন জামে মসজিদের দক্ষিণ পশ্চিম কোন সংলগ্ন মোড়ে এই ঘটনা ঘটে।
আকস্মিক ঘটে যাওয়া এই ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নড়েচড়ে বসে জেলার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
দিন শেষে সন্ধ্যায় তদন্তে নেমে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শহরের থানাপাড়া ছয় রাস্তার মোড় এবং হাউজিং বি-ব্লক থেকে দুই নারীকে আটক করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ।
আটকরা হলেন- শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী সোহানা ইসলাম (৪৪) এবং হাউজিং বি-ব্লকের বাসিন্দা মোবাইল ব্যবসায়ী রিপন হোসেনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার শান্তা (৩৯)।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ঘটনাস্থলে ঘটে যাওয়া দৃশ্যে দেখা যায়- কোর্ট স্টেশন জামে মসজিদের সামনে জ্যাম কাটাতে দায়িত্ব পালন করছিলেন কনস্টেবল নাজমুল হাসান। এসময় দূর থেকে দুই নারী এসে নিজ পায়ের স্যান্ডেল খুলে আকস্মাৎ নাজমুলকে মারধর শুরু করেন। আশপাশের লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা।
ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত ফার্মেসির দোকানদার প্রত্যক্ষদর্শী আসিফ বলেন, ওই নারী তার বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন, এসময় সার্টল ট্রেন এসে প্লাটফরমে দাঁড়ানোর কারণে রেলগেটের দক্ষিণপাশে বিভিন্ন যানবাহনের জ্যাম সৃস্টি হয়। কিছুক্ষণ পর ট্রেন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ওই নারী তার রিকশাটি পার করে দিতে বলেন। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম থাকায় ট্রাফিক পুলিশ সেটা করে দিতে পারেনি। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ওই নারীসহ আরও এক নারী এসে পুলিশকে বেধড়ক মারধর করে চলে যান’। তবে ঠিক কি কারণে ওই নারীরা মারধর করেছে সেটা আমরা বুঝে উঠতে পারিনি’।
ফুটপাতের বাদাম বিক্রেতা অপর প্রত্যক্ষদর্শী নিরুচাঁদ বলেন, দুই নারী এসে ট্রাফিক পুলিশকে স্যান্ডেল দিয়ে মারধর করে চলে যায়, এসময় তাদের কোনো কথা বলতে শুনিনি। কথা বল্লে হয়তো বুঝতে পারতাম কি কারণে মারছে।
ঘটনাস্থলে আক্রান্ত পুলিশ সদস্য নাজমুল হাসান জানান, ‘আমি সদ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে ট্রান্সফার হয়ে কুষ্টিয়ায় কর্মস্থলে যোগ দিয়েছি। এই জেলায় আমার সহকর্মীদের বাহিরে তেমন কারো সঙ্গে এখনও ঠিকমতো পরিচয়ই হয়ে ওঠেনি। অথচ আজকে আমার ওপর দুই নারী যে হামলা করেছে তাতে যে কেউ দেখে মনে করতে পারেন যে তাদের সঙ্গে আমার আগে থেকে কোনো পরিচয় ছিল বা দ্বন্দ্বের কারণে আমাকে মারধর করেছে। বিষয়টি আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েও পড়েছে। সে কারণে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা দানের অভিযোগ এনে মামলা করেছি।
গ্রেপ্তার সানজিদা আক্তার শান্তা’র স্বামী রিপন হোসেন বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশের একটি মাইক্রোবাস এসে দোকান থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে বাসায় গিয়ে আমার স্ত্রী শান্তাকে থানায় নিয়ে যায়। তখনও আমি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। পরে পুলিশের দেখানো ভিডিও ফুটেজে আমি আমার স্ত্রীকে শনাক্ত করি। ওই ভিডিও ফুটেজের ঘটনা দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেছি। এটা কীভাবে সম্ভব? আমার স্ত্রী শান্তা এমন অস্বাভাবিক আচরণ কেনো করলো তা আমিও বুঝে উঠতে পারছি না। এমনকি এর আগে কখনো শাস্তার এমন আচরণ আমার চোখে পড়েনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলিশ পরিদর্শক শেহাবুর রহমান জানান, ‘রাষ্ট্রীয় কাজে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের অভিযোগে আক্রান্ত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল হাসানের দেওয়া এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে আটক দুই নারীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।