অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা
প্রকাশিতঃ ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
জেলা প্রতিনিধি,ভৈরবে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে হত্যা করে স্বামীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার পৌর শহরের রাণীর বাজার শাহী মসজিদ পিছনের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। নিহতরা হলেন, মৃত গরেঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে জনি বিশ্বাস (৩২), তার স্ত্রী গাজীপুরের নির্মল মল্লিকের মেয়ে নিপা মল্লিক (২৬), ছেলে দ্রুব বিশ্বাস (৭) ও মেয়ে কথা বিশ্বাস (৫)।
স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরের রাণীর বাজার শাহী মসজিদের পিছনের শাহজাহান মিয়ার বিল্ডিংয়ের ৬তলা ভবনের ৬ষ্ঠ তলার একটি রুমে সাবলেট নিয়ে থাকতেন। ২৪ নভেম্বর রোববার স্ত্রী সন্তানদেরকে নিয়ে নরসিংদীর আনারাবাজ নিজ গ্রামে যায় জনি বিশ্বাস। সেখান থেকে ২৫শে নভেম্বর সন্ধ্যায় এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে। ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল থেকে পার্শ্ববর্তী রুমে ভাড়াটিয়া ও জনি বিশ্বাসের কর্মস্থলের কর্মচারীরা ডাকাডাকি করলে তার পরিবার দরজা না খোলায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হলে দরজা ভেঙ্গে দেখতে পায় চারজনই মৃত অবস্থায় রয়েছে। এদের মধ্যে জনি বিশ্বাস ফাঁসিতে ঝুলে আছেন। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন।
এ বিষয়ে বিল্ডিং মালিক রিনা বেগম বলেন, আড়াই মাস আগে জনি বিশ্বাসের পরিবারকে ভাড়া দেয়। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া জানান তারা দরজা খুলছে না। পরবর্তীতে আবার ৩টায় জানান দরজা খুলছেই না। স্থানীয়রা এসে দরজা ভেঙ্গে দেখতে পায় তারা মৃত অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া সৃষ্টি বর্মণ বলেন, ২৫শে নভেম্বর সোমবার জনি তার পরিবার নিয়ে বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় বাসায় আসে। আমি তখন বাজারের পাশে একটি মাজারে চলে যায়। রাতে এসে দেখি তাদের দরজা বন্ধ। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় তাদের ডাকাডাকি করি তারা দরজা খুলেনি। বিকাল ৩টায় আবার ডাকতে গেলেও দরজা না খুললে আমি বাড়ির মালিকসহ প্রতিবেশীদের জানায়। স্থানীয়রা এসে দরজা ভেঙে তাদের মরদেহ দেখতে পায়।
এ বিষয়ে নিহতের মা শিখা রাণী বিশ্বাস জানান, ১০ বছর যাবত ভৈরবে থাকে জনি ও তার দুই ভাই। জনি ভৈরব বাজার মিজান মিয়ার ওয়ার্কসপে কাজ করতো। আট বছর আগে ছেলে বিয়ে করাই। বিয়ের পর থেকে বউয়ের সাথে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। দুদিন আগে ছেলে তার বউকে নিয়ে থেকে এসেছে। ছেলে আমাকে ভয় পায় বলে কিছুই জানাতো না। আমি ছোট নাতনির মুখে শুনতে পেয়েছিলাম। তারা এখানে বছর খানেক থাকবে। ছেলের বউ ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কি কারণে আমার ছেলে এ কাণ্ড ঘটালো আমার বুঝে আসছে না।
এ দিকে পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, ধারণা করা হচ্ছে জনি বিশ্বাস প্রথমে স্ত্রীকে গলা কেটেছে, পরে দুই ছেলে মেয়েকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে। পরে নিজেই ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।
এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) ওসি মোহাম্মদ শাহীন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করি। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো কিশোরগঞ্জের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে- স্ত্রী সন্তানকে হত্যা করেই আত্মহত্যা করেছে জনি বিশ্বাস।