মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাই বিদ্যুতের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে

প্রকাশিতঃ ১২ অক্টোবর, ২০২৪  

বিশেষ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাই বিদ্যুতের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৌর শহরসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নেই রয়েছে ব্যাটারী চালিত এসব অটোরিকশা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ বা বিদ্যুৎ কতৃপক্ষ কেউই জানেন না এলাকায় কতটি অটোরিকশা রয়েছে। শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই যানগুলো। আর এসব রিকশার কারণে জনজীবন এখন অতিষ্ট হয়ে পড়ছে, বাড়ছে যানজট ও বিদ্যুৎবিভ্রাট। প্রতিদিনই সড়কে নতুন নতুন আটোরিকশা ও চালক দেখা যাচ্ছে। এদের বেশিরভাগের নেই রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্স। অনিয়ন্ত্রিত হারে এসব পরিবহনের ব্যাটারি চার্জ দেওয়ায় বিদ্যুতের ঘাটতি ও বিদ্যুৎবিভ্রাটের মূল কারণ হিসেবে মনে করছেন অনেকে।

শহরের মূল রাস্তায় সকালে স্কুল ও অফিস শুরুর সময় এবং সন্ধায় যানজটের পরিমান বেশি হয়ে থাকে। কখনো কখনো অতিরিক্ত যানজটের কারণে কুলাউড়া শহরের দক্ষিণবাজার থেকে উত্তরবাজার যাতায়াতে ৩০-৪০মিনিট সময় লেগে যায়। এ সব ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা প্রতিদিন চার্জ করতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা। ফলে বিদ্যুতের বৃহৎ একটা অংশ ব্যাবহার হচ্ছে অটোরিকশা চার্জ করতে। এমনিতেই বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে আর এই সকল অনিয়ন্ত্রিত যানগুলোর জন্য বিদ্যুৎ অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেই কুলাউড়া উপজেলার বিদ্যুত গ্রাহকরা প্রতিদিনই গড়ে ৩-৪ঘন্টা লোডশেডিংয়ে পড়তে হয়।

ভূক্তভোগি বিদ্যুত গ্রাহকরা জানান, বিদ্যুৎ না থাকার কারণ হিসেবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে দায়ী করছেন। তাদের মতে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ দেওয়া হয়। ফলে বিদ্যুৎ অতিরিক্ত ব্যবহার বেড়েছে। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের ব্যাপারে বিদ্যুত বিভাগের পক্ষ থেকে তদারকি, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে ও ট্রাফিক অভিযান তৎপর হলে শহরে অটোরিকশার পরিমান নিয়ন্ত্রিত হবে বলে মনে করছেন তারা।

সচেতন মহলের প্রশ্ন বিদ্যুতের সাব স্টেশন নির্মাণ হয়েও কোনো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না তারা। বরং বেড়েছে বিদ্যুৎবিভ্রাটের মাত্রা।

অটোরিকশা লাভজনক হওয়াতে প্রতিনিয়ত এর বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অনেক জায়গাতে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে ওঠেছে গ্যারেজ। কেউ কেউ মাসিক চুক্তিতে গ্যারেজে রাখছেন অটোরিকশা। কয়েকজন চালক জানান, ব্যাটারি চার্জসহ রাতে গ্যারেজে রাখার জন্য গ্যারেজ মালিককে প্রতিদিন অটোরিকশা বাবত তাদের দিতে হয় ১০০-১২০ টাকা।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া পৌরসভার উচ্চমান সহকারী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪০০টি অটোরিকশার রেজিস্ট্রশন, লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। তবে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রেজিস্ট্রশন কেউ নেয়নি।

এদিকে কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন জানান, তাদের কাছে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার কোনো হিসাব নেই। তবে অটোরিকশা চার্জ দেওয়ার ক্ষেত্রে আলাদা নির্ধারিত ট্যারিফে শুধু কুলউড়ায় ১২০টির মতো মিটার রয়েছে। এ কার্যালয়ের আওতাধিন কুলাউড়া ও জুড়ীর বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন ৫৫ হাজারের মতো। শুধু কুলাউড়াতে ৩৯ হাজার ৫০০ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন। এখানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৯ মেগাওয়াট। তিনি আরো জানান, চাহিদার তুলনায় কত মেগাওয়াট মিলছে এটা নির্ধারিত নয়, উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে এক এক অনুপাতে পাওয়া যায়, যেমন আজকে চলছে ১০ মেগাওয়াট আবার কখনো কখনো চাহিদার পুরোটা পেয়ে থাকেন। বিদ্যুত চাহিদার কম হলে বিদ্যুৎবিভ্রাট করতে হয়। অবৈধ সংযোগের খবর জানলে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানাসহ এ বিষয়ে ৭৫টি মামলা হয়েছে।