নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে একই পদে চাকরি করছেন দুই ব্যক্তি
প্রকাশিতঃ ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
সোনার বাংলা ৭১ ডেস্ক: সহকারী গ্রন্থাগারিক থাকা সত্ত্বেও মোটা অঙকের উৎকোচের বিনিময়ে একই পদে আরেকজনকে নিয়োগদানের অভিযোগ উঠেছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও তার মামা প্রভাষক জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে। গুরুদাসপুর পৌর সদরের নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটেছে ওই ঘটনা।
সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে একই সাথে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন দুই ব্যক্তি। তবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন ২০০৫ সালে নিয়োগ পাওয়া আলেয়া খাতুন। শিক্ষকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে দ্বিধা-বিভক্তি। অবৈধ ওই নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন গ্রন্থাগারিক পদে আগে নিয়োগ পাওয়া আলেয়া খাতুন।
ভুক্তভোগী আলেয়া খাতুন অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে তিনি বিনা বেতনে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ আওয়ামী লীগের দাপটে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও সাবেক অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন একই পদে অন্য একজনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এ কারণে তিনি মানষিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি অবৈধ নিয়োগটি বাতিলের দাবি করেন।
বিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে ১৯৪১ সালে নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সময়ের প্রয়োজনে ২০০৫ সালে স্কুলের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে কলেজ শাখা চালু করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ওই বছরের ১৩ মার্চ বিভিন্ন পদে অন্তত ৩৬জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে ১৯৯৫ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে আলেয়া খাতুন নামের এক নারীকে নিয়োগ দেয় তৎকালিন পরিচালনা পর্ষদ।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বলছে, ১৯৯৫ এবং সবশেষ ২০১৮ সালের নিয়োগবিধি মোতাবেক স্কুল অ্যান্ড কলেজে সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ একটি। ওই পদে কোনো নিয়োগ হয়ে থাকলে তা বাতিলপূর্বক পদ শূণ্য না করা পর্যন্ত নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। অথবা একই পদে দুইজনকে নিয়োগদানের সুযোগও নেই।
নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জালাল উদ্দিন শুক্তি বলেন, সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন আলেয়া খাতুন। আলেয়া খাতুনের নিয়োগ বহাল রেখেই ১৪ বছর পর একই পদে ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর তাসলিমা খাতুনকে নিয়োগ দিয়েছে তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ। এখন দুজনই সহকারি গ্রন্থাগারিকের পদে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনিও বিব্রত।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্বে আসেন। সে সময় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের প্রভাষক পদে চাকরিরত থাকা অবস্থায় বিধি ভঙ্গ করে জয়নাল আবেদীনকে নাজিম স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ করা হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আক্তার বলেন, সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদে পদে দুই জনকে নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন বলেন, সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ ফাঁকা থাকায় সেখানে তাসলিমা নামের এক নারীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি। একই পদে আগে দেওয়া নিয়োগের কথা তিনি জানতেন না।
পরিচালনা পর্ষদের সদ্য সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, আলেয়া বেগমের নিয়োগপত্রে ত্রুটি থাকায় ২০১৯ সালে একই পদে অন্য একজনকে নিয়োগ ছিয়েছেন তিনি।
তবে তাসলিমা খাতুনের মোবাইল ফোন না ধরায় এব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, একই পদে দুই ব্যক্তির চাকরি করার সুযোগ নেই। তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।