সরাইলে ইকবাল আজাদ হত্যা,সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান-মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
প্রকাশিতঃ ০৬ জুলাই, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এ কে এম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং তার ছেলে ও মেয়ের জামাতাসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বেকসুর খালাস পেয়েছেন ১৩ জন।
গত বুধবার (৩ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী এ রায় দেন।
আদালত সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া চার আসামি হলেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর; উপজেলা যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি মাহফুজ আলী, মোকারম আলী এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন কমান্ডার ইসমত আলী।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফেজুল আসাদ সিজার, সরাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসমত আলীর ছোট ছেলে মোবাশ্বের আলী বাবু, হারিছ, বকুল, লিমন, আবদুল্লাহ, শরিফ ও মিজান।
খালাসপ্রাপ্ত ১৩ জন হলেন রাসেল, ইমদাদ, হাবিব, ইনু মিয়া, মুছা মিয়া, জনি মিয়া, নয়ন মিয়া, সাদেক মিয়া, আরব আলী, ইঞ্জিনিয়ার মশিউর রহমান, মিস্টার আলী, কামরুল ইসলাম ও আল ইমরান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অশোক কুমার দাশ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ১২ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১০ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ১৩ জনকে খালাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। মামলা চলাকালীন দুই আসামি মারা যান বলেও জানান তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি গঠনের জের ধরে খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। এ ঘটনায় সরাইল আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আবদুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর, যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাফেজুল আসাদ সিজার, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইসমত আলীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের ছোট ভাই এ কে এম জাহাঙ্গীর আজাদ।
দুইমাস পর ১৭ ডিসেম্বর ঘটনার সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আখিতারা গ্রামের সাদেক মিয়াসহ আরও সাতজনের সম্পৃক্ততা বেরিয়ে আসে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
২০১৩ সালের ৫ মার্চ ইকবাল আজাদ হত্যা মামলাটি চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। আদালতে চিকিৎসকসহ ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তবে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষী বাকি থাকা অবস্থায় মামলার ১৩৫ কার্যদিবস শেষ হয়ে যায়। ফলে বিচার ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুসারে মামলাটি আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর মামলাটি আবার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে ক্রিমিনাল রিভিশন করেন মামলার বাদী।
এর পরিপ্রেক্ষিত মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন হাইকোর্ট। এরপরই ২০২৩ সালের ১৭ মে থেকে চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার রায় ঘোষণা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য থানা–পুলিশের পাশাপাশি জেলা সদর থেকে আসা পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আমি নিজেও মাঠে রয়েছি। আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। আশা করি, আর সমস্যা হবে না।’
ইকবাল আজাদ (৫০) ছিলেন উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। ১৯৯০ সালে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। ইকবাল আজাদের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী শিউলি আজাদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন।
শিউলি আজাদ বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনজনের আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।