সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প

প্রকাশিতঃ ২০ জুন, ২০২৪  

চিত্র বিচিএঃনওগাঁ জেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মৃৎশিল্পীদের বাসস্থান। এসব গ্রামে প্রায় আট থেকে দশ হাজার মৃৎশিল্পী মাটির জিনিসপত্র তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে। এসব এলাকা থেকে তৈরি মৃৎশিল্পের মনকাড়া পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে জায়গা করে নিয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময় হয়তো স্থান হবে জাদুঘরে। সে সময় হয়তো আর বেশি দিন নয়। পূর্বপুরুষদের এ পেশাটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত চলছে সংগ্রাম। দইয়ের ভাঁড় তৈরি করে সংসারের হাল ধরেছে গ্রামীণ নারীরাও কিন্তু মৃৎশিল্পকে ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে কারিগরদের। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার দাবী জানান পেশার সাথে জড়িতরা। এক সময় বেশ কদর ছিল মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কিন্তু  বর্তমান সময়ে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম এবং প্লাস্টিক থেকে তৈরি জিনিসপত্রের সাথে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ পেশার সাথে জড়িতদের জীবন যাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। জেলার গ্রামগুলোতে এখন আর মাটির হাড়ি-পাতিল তেমন চোখে পড়ে না। এছাড়া মৃৎশিল্প তৈরির উপকরণ মাটি সংকট, খড়ির দাম বেশি হওয়ায় দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদাও কমেছে।

সম্প্রতি বদলগাছির পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক নারী ও পুরুষ মাটির দইয়ের হাঁড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ মাটিকে নরম করছে, কেউ ভাঁড়ের আকার দিচ্ছে আবার কেউ পুড়াচ্ছে এভাবে চলছে। পালপাড়া গ্রামের চন্দনা রানী বলেন, মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমেছে বলে গ্রামের নারীরা এখন দইয়ের হাঁড়ি তৈরি করে রোজগার করছে। দইয়ের হাঁড়ি ছাড়া আমাদের কোনো কাজ নেই তেমন। বিভিন্ন স্থান থেকে আঠালো মাটি কিনে আমরা এ কাজগুলো করি তবে আমাদেরকে যদি সরকারীভাবে সুদমুক্ত ঋণ দিলে এ ব্যবসাকে বড় করা যাবে।আরেক গৃহবধূ দীপালী মহন্ত বলেন, এ কাজের মাধ্যমে আমাদের সংসার চলে। দইয়ের হাঁড়ি বানানোর মাধ্যমে যা রোজগার হয় সেটা দিয়ে স্বামীকে সহযোগিতা করি, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালায়। ব্যবসাকে বড় করতে চাই এজন্য যদি সহযোগিতা পাওয়া যেত তাহলে আরো বড় পরিসরে কাজগুলো করা যেত। ব্যবসায়ী তপন কুমার পাল বলেন, কাঁচা অবস্থায় আমরা প্রতিটি দইয়ের হাঁড়ি ৫-৬ টাকা করে কিনি সেটা পুড়িয়ে ৯-১০ টাকা বিক্রি করে থাকি। এক সময় সব ধরনের মাটির জিনিসপত্র তৈরি হতো কিন্তু এখন দইয়ের হাঁড়ি-ই কেবল ভরসা।

তিনি আরো বলেন, নদীর আঠালো মাটি দরকার এ কাজের জন্য। সারা বছরই এ কাজ করা হয়। তবে বর্ষা মওসুমে সময়ও বেশি এবং কষ্টসাধ্য। সারা বছর কাজ করার জন্য চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মাটি কিনে সংগ্রহ করতে হয়। সুনিপুণভাবে হাঁড়ি, পাতিল, ঢাকনা, কাসা, পেয়ালা, মাইসা, সাতখোলা, ব্যাংক, কলস, ডাবর, পানি রাখার পাত্রসহ প্রভৃতি তৈরি করা হয় এখানে। এগুলোর তেমন কদর না থাকলেও দইয়ের পাতিলের চাহিদা রয়েছে।
নওগাঁ বিসিকের জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আখতার মামুন বলেন, আমরা সব সময় উদ্যোক্তাদের পাশে আছি। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য শতকার ৫ ভাগ এবং পুরুষ উদ্যোক্তাদের জন্য শতকার ৬ ভাগ বিনা সুদে খুব সহজ পদ্ধতিতে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।  তারা চাইলে আমাদের কাছ থেকে নিতে পারেন খুব সহজেই।