সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

 কোরবানির ঈদ ঘিরে কামার পল্লীতে নেই কোনো ব্যস্ততা

প্রকাশিতঃ ১১ জুন, ২০২৪  

বিশেষ প্রতিনিধি, দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। আগামী ১৭ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঈদুল আজহা। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অলস সময় পার করছেন ঝিনাইদহ জেলার কামার শিল্পীরা। সারা বছর অলস সময় পার করলেও কোরবানির মৌসুমে বেশ ব্যস্ততা বেড়ে যেতো কামার পাড়ায়।

দিনরাত সমান তালে লোহার টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠতো প্রতিটি কামার ঘর। অনেকেই আসতো কোরবানি করার অন্যতম অনুসঙ্গ ডাসা, ছুরি, বটি, হাসুয়াসহ বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করতে। আবার কেউবা আসতো এসব সরঞ্জাম শান দিতে।কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আর আধুনিক মেশিনে তৈরি সরঞ্জামে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় কামারশিল্পে পড়েছে ভাটা। আর তার ফলে এবার কামার পল্লীতে নেই ঈদের আমেজ। যদিও এক সময় কোরবানির ঈদের সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকতো কামারপাড়াগুলো। পেশায় ভাটা পড়ায় দিন দিন কামার শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় পাওয়া পেশা ছেড়ে খুঁজে নিচ্ছেন অন্য পেশা। এতে এই শিল্পটি হারানোর মুখে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকার কামার পাড়া ঘুরে কামার শিল্পীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

বিভিন্ন কামার দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদের আর মাত্র সপ্তাহ খানেক বাকি থাকলেও কামার দোকানগুলোতে নেই ক্রেতাদের ভিড়। বছরে একবারই ভালো ব্যবসার আশায় বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা কামার শিল্পীরা ক্রেতাদের আসার প্রহর গুনছেন। আশানুরূপ বিক্রি নেই বলে মন ভালো নেই কামার শিল্পীদের।

মহেশপুর বাজারের কামার শিল্পী সাধন কর্মকার জানান, আধুনিক যন্ত্রপাতির দখলে বাজার হওয়ায় এখন আর কদর নেই কামারশিল্পীদের। সারাবছর যেমন তেমন, এই ঈদেও তাদের হাতে তেমন কাজ নেই। দিন দিন তাদের ব্যবসার পরিসরটা ছোট হয়ে আসছে।

আরেক কামার দিলিপ বলেন, বংশ পরম্পরা ধরে রাখতেই এখনো এ পেশায় জড়িয়ে আছি। বাজারের আধুনিক পণ্যসামগ্রীর প্রসারে আমাদের তেমন বিক্রি নেই। আমি ছোটবেলায়ও দেখেছি, আমার বাপ-চাচারা এরকম ঈদ মৌসুমে শ্বাস ফেলার ফুরসত পেত না। দিন-রাত টানা পরিশ্রম করেও ক্রেতার চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হতো।

তিনি আরও বলেন, এখন কোরবানি ঈদের কয়েকদিন কাজের চাপ থাকলেও আর বাকি সময়গুলো অলসভাবে কাটাতে হয়।

একই এলাকার রতন কামার বলেন, কয়লা-লোহার দাম বেড়েছে, সে তুলনায় মজুরি পাই না। বাব-দাদার পেশা, তাই এ পেশা ছেড়ে দিতে পারছি না।

কামার কমিটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, এক সময় কোরবানির ঈদের আগের এই সময়টায় কামার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যেত। তবে দিন দিন আধুনিক মেশিনে তৈরি গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত পণ্য বাজার দখল করে নেওয়ায় কামারদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। তবে পুরনো যন্ত্রপাতি শান দিতে অনেকেই কামারদের কাছে আসছেন।