বুধবার ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সরাইল ও বিজয়নগর উপজেলায় ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়েছে অর্ধশতাধিক কৃষকের স্বপ্ন

প্রকাশিতঃ ০২ মে, ২০২৪  

সোনার বাংলা ৭১ রিপোর্ট, ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং বিজয়নগর উপজেলার সাপুটিয়া শশই হাওরের অন্তত ২৪ একর জমির উঠতি বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরে তোলার আগমুহূর্তে বছরের একমাত্র ফসল ইরি এবং বোরো ধান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অর্ধশতাধিক কৃষক। এ নিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছেন, বিশাল সাপুটিয়া হাওরের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত শাপলা অটো ব্রিকস এবং ইউনিয়ন ব্রিকস। দুটি ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় তাদের উঠতি বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ না পেলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তাদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনালি ধানে হাসছে বিস্তীর্ণ হাওর। বেশিরভাগ জমির ধান ভালো থাকলেও দুটি ইটভাটার আশপাশের ২৪ একরের বোরো ধানগাছের শিষ চিটা হয়ে গেছে। দূর থেকে দেখে মনে হয় পাকা ধানক্ষেত। কাছে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এগুলোর ভেতরে চাল নেই। সব চিটা হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধারদেনা করে ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। শীষগুলোতে ফুলও এসেছিল পর্যাপ্ত পরিমাণ। কিন্তু শাপলা অটো ব্রিকস এবং ইউনিয়ন ব্রিকসের কালো ধোঁয়ায় সব ধান এখন নষ্ট হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে দুটি ইটভাটার মালিকপক্ষ আমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। এ বছর শাপলা অটো ব্রিকস কর্তৃপক্ষ কিছুটা নমনীয় হলেও ইউনিয়ন ব্রিকস কর্তৃপক্ষ কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টি একেবারেই আমলে নিচ্ছে না। এ অবস্থায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছি আমরা।’

মো. হাকিম মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘এই জায়গায় আগেও আমরা ধান করে ঘরে নিতে পেরেছি। যখন থেকে এখানে ইউনিয়ন ব্রিকস দিয়েছে, তখন থেকে আর ধান ঘরে তুলতে পারি না। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আমাদের সব ধান নষ্ট হয়ে যায়। এর আগে দুই-তিনবার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল তারা। এ বছর ফসল নষ্ট হলেও তারা ক্ষতিপূরণ দিতে চায় না। যদি ক্ষতিপূরণ না দেয় তাহলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’

ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফসল চাষ করেছি। এখন ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আমাদের সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তারা আমাদের ক্ষতিপূরণ দেবে না বলছে। আমরা এখন কোথায় যাবো? যদি আমরা ক্ষতিপূরণ না পাই, তাহলে আমরা আন্দোলন করে ক্ষতিপূরণ আদায় করবো।’

চান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার কাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সাপুটিয়া হাওরের পাড়ে শাপলা অটো ব্রিকস এবং ইউনিয়ন ব্রিকস নামে দুটি বড় আকারের ইটভাটার ধোঁয়ার আমাদের স্বপ্নের সোনালি ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমাদের সারা বছরে একটাই মাত্র ফসল হয়। সেই ফসল নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এখন যদি কর্তৃপক্ষ আমাদের না দেখে, তাহলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।’

এদিকে, ভাটা মালিক পক্ষের বক্তব্য নিতে গেলে সাংবাদিক দেখে অফিসের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে গোপনে চলে যান ইউনিয়ন ব্রিকসের দায়িত্বশীলরা। তবে কৃষকদের দাবির বিষয়টি যৌক্তিক এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন শাপলা অটো ব্রিকস কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, ‘ইটভাটার ধোঁয়ার জন্য যে চিমনি ব্যবহার করা হয়, সেটির একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা রয়েছে। যদি চিমনি নিচে হয় তাহলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাপুটিয়া বিলের বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবো। যেন কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে আমরা খেয়াল রাখবো।’

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। কৃষকরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে অবশ্যই ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইটভাটার ধোঁয়ায় অন্তত অর্ধশতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’