মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সরাইলে খাসজমির ধান কাটা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩০

প্রকাশিতঃ ১৪ এপ্রিল, ২০২৪  

নিজস্ব প্রতিবেদক,ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে খাসজমির ধান কাটা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কামাল উদ্দিন (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার দুপুরে শাহজাদাপুর ইউনিয়নের শাহজাদাপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহত কামাল উদ্দিন ওই গ্রামের শাহাদৎ আলীর ছেলে। এ ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে আটক করেছে।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, শাহজাদাপুর গ্রামের তিতাস নদের পাড়ে ৬০ শতাংশ খাসজমির দখল নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ মো. জুয়েল ও তাঁর আত্মীয় মো. কাউছার মিয়ার সঙ্গে মোশাররফ হোসেনের বছরখানেক ধরে বিরোধ চলে আসছে। স্থানীয় নদের পাড়ের ওই জমি ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে কাউছার মিয়ার পরিবারের দখলে রয়েছে। খাসজমির পাশের ৫০ শতাংশ জমির মালিকানা মোশাররফ হোসেন ও তাঁর পরিবারের লোকজন। প্রায় ২৫ বছর আগে মোশাররফের বাবা খুন হলে এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই জমি পান তাঁরা। বছরখানেক ধরে তাঁরা পাশের খাসজমির মালিকানাও দাবি করে আসছিলেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গতকাল শুক্রবার কাউছার মিয়া ওই খাসজমির ধান কাটেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ গ্রামে গিয়ে প্রথমে কাটা ধান জব্দ করেন। পরে শাহজাদাপুর ইউপির চেয়ারম্যান আছমা আক্তারের জিম্মায় কাউছার মিয়ার কাছে ওই ধান ফেরত দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনকে নিয়ে থানার পুলিশ একাধিকবার বৈঠকে বসে। ধান ফেরত পাওয়ার পর কাউছার মিয়ার লোকজন প্রতিপক্ষের লোকজনকে উদ্দেশ করে নানা কটুকথা বলে আসছিলেন। এ নিয়ে আজ সকাল থেকে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গ্রামে পুলিশও মোতায়েন করা ছিল।
এর মধ্যেই শুক্র বার সকাল ১০টার দিকে কাউছার মিয়ার বড় ভাই মাসুক মিয়ার বাড়িতে ইউপি চেয়ারম্যান আছমা আক্তারের নেতৃত্বে আবারও বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে চার ইউপি সদস্য আবদুল হক, আজহার মিয়া, শেখ মো. জুয়েল ও মহিলা সদস্য নাজমা আক্তারসহ দুই শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এর মধ্যেই শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে কাউছার মিয়ার বড় ভাই মাসুক মিয়ার বাড়িতে ইউপি চেয়ারম্যান আছমা আক্তারের নেতৃত্বে আবারও বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে চার ইউপি সদস্য আবদুল হক, আজহার মিয়া, শেখ মো. জুয়েল ও মহিলা সদস্য নাজমা আক্তারসহ দুই শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

চিকিৎসক সুমাইয়া হক বলেন, ‘কামাল উদ্দিনকে আমাদের এখানে আনা হয়েছে বেলা একটায়। এখানে আনার অন্তত ৩০ মিনিট আগেই তিনি মারা গেছেন। তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ মো. জুয়েল বলেন, ‘মূলত ইউপি চেয়ারম্যান আছমা আক্তারের ইন্ধনেই মোশাররফ হোসেনের লোকজন আমাদের পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছেন। আমরা শান্তির লক্ষ্যে গ্রামে বৈঠক করছিলাম। এমন সময় আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে তাঁরা আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আছমা আক্তার বলেন, ‘আমি তিন দিন ধরে উভয় পক্ষের লোকজনকে হাতে–পায়ে ধরে মীমাংসার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে জুয়েল মিয়ার লোকজন ওই জমির ধান কেটে ফেলায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে আমার কোনো ইন্ধন নেই। তাঁরা এখন মিথ্যা বলছেন। আমি চেষ্টা করেছি যেন কোনো প্রকার সংঘাত না হয়।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল)রকিবুল হাসান জানান, ‘লাশ উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে। আমি শাহজাদাপুর গ্রামেই আছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গ্রামের অবস্থা শান্ত রয়েছে।’