সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

কৃষি জমির মাটি কেটে সাবাড়

প্রকাশিতঃ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪  

বিশেষ প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ির রামগড়ে অবৈধভাবে পাহাড় ও কৃষি জমির মাটি কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে একটি মাটি খেকো চক্র। চক্রটি উন্নয়ন কাজের দোহাই দিয়ে দিনে-রাতে প্রকাশ্যেই চালাচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ। দীর্ঘদিন ধরে লাগাতার এ ধ্বংসযজ্ঞ চললেও লোক দেখানো দুয়েকটি অভিযানেই সীমাবদ্ধ প্রশাসন। ফলে প্রভাবশালী বেপরোয়া এ চক্রটির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না কেউ। কেউ কথা বলতে চাইলে তাকে হেনস্তাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। ইতিমধ্যে রামগড়ে ১৫-২০টি পাহাড় এবং শত শত হেক্টর কৃষি জমির মাটি কেটে সাবাড় করা হয়েছে। এ মাটি বিক্রি করে অনেকে হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী পাহাড় কাটা অবৈধ হলেও তা তোয়াক্কা করছেন না কেউ। ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’ অনুযায়ী কৃষি জমির মাটি কাটার কঠোর আইন থাকলেও সেদিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। রামগড় পৌরসভার ৫নং চৌধুরীপাড়া এলাকার বৈদ্যটিলা নামক স্থান থেকে দেদারছে অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে পাহাড়।প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে চলে পাহাড় কাটা।

এ সময় পাহাড়ের মাটি পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয় ১৮-২০টি বড় ড্রাম ট্রাক। প্রতি রাতে ২৫০-৩০০ গাড়ি মাটি বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গা ভরাটের কাজে। এতে প্রতি ফুট মাটির মূল্য নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা করে। ১শ’ ফুটের এক গাড়ি মাটির মূল্য ১ হাজার টাকা। এ ছাড়াও রামগড় পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের জগন্নাথ পাড়া, চিনছড়িপাড়া, বল্টুরামটিলা এলাকায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। ৭নং ওয়ার্ডের বলিটিলা, বাগানটিলাসহ পৌর এলাকার বাইরেও দেদারছে কাটা হচ্ছে পাহাড়। এদিকে নতুন করে মাটি কাটার তাণ্ডবলীলা শুরু হয়েছে মহামুনি বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন পাশের বিলে। এখানে নতুন উদ্যমে পানি সেচের সরকারি ড্রেন ভেঙে প্রায় ১৫০ একর কৃষি জমির মাটি কাটার এজেন্ডা নিয়েছে মাটি খেকো এই সিন্ডিকেট চক্রটি। ২টি স্কেভেটর এবং ২০-২৫টি ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি কাটা শুরু হয়েছে এখানে। কয়েক হাজার মানুষের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এ বিলে প্রায় ২০০ একর জমি রয়েছে। এভাবে কৃষি জমি ধ্বংস করায় ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রামগড় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘কৃষি জমির মাটি কেটে নেয়ার ফলে সেখানে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে। কোনো অবস্থাতেই কৃষি জমির মাটি কাটা উচিত নয়। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আইনি পদক্ষেপ নেবো।’ 

এসব অভিযোগের তীর রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী, পৌরসভার ১নং পৌর কাউন্সিলর আব্দুল হক ও ৩নং কাউন্সিলর জিয়াউল হকের দিকে। এ একই অভিযোগে অভিযুক্ত রয়েছেন আরাফাত ও আবু বক্কর নামে আরও দু’জন। অভিযোগ নিয়ে রামগড় পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জিয়াউল হক জিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, ‘এখানে মূলত ৩-৪টি গ্রুপ মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত। উপজেলা চেয়ারম্যান সরাসরি জড়িত নয়। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে সবাই মিলেমিশে কাজ করছে। এখানে অনেক গ্রুপের লোকজন রয়েছে। ৪-৫ জন করে কয়েক গ্রুপে কাজ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। সবারই তো আশা-ভরসা থাকে।’ ১নং পৌর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল হক বলেন, ‘আপনি কে? মাটি কাটার বিষয়ে আমি আপনাকে কেন বলবো? আপনি ঠিকাদারের সঙ্গে গিয়ে কথা বলেন।

অভিযুক্ত অপর ২ জন আরাফাত এবং আবু বক্করকে এ বিষয়ে কথা বলতে কল দিলে তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।’ অভিযোগের বিষয়ে গতকাল রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারীর অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার দু’টি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও কল রিসিভ করেননি। মোবাইলে মেসেজ পাঠালে ও কোনো উত্তর দেননি। রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘যেখানেই আমরা পাহাড় কাটা অথবা কৃষি জমির মাটি কাটার অভিযোগ পেয়েছি সেখানেই অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে চায় না। এবার আমরা খুবই হার্ড লাইনে যাবো। যেভাবেই হোক আমরা পাহাড় এবং কৃষি জমি রক্ষা করতে চাই।’ খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনবো।’