রাতের আঁধারে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
প্রকাশিতঃ ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আকোটের চর ইউনিয়নের ছলেনামা গ্রামের পদ্মা নদীর তীরে চলছে ফসলি জমির মাটি কাটার ধুম। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিন-রাত ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি মহল। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। এক্সকাভেটর দিয়ে এমনভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, একটু বৃষ্টি হলেই পাশের জমি ভেঙে পড়বে।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাশের জমির মালিকও। সেই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। এতে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের কবলে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে প্রায় ৫০টি পরিবার।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আকটের চর এলাকার নতুন ছলেনামা গ্রামের পদ্মার পাড় থেকে রাতের আঁধারে এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে ৪০-৫০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।
ভাটা মালিকরা কৃষকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে নদী পাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়বে ছলেনামা গ্রামসহ শত শত একর ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা।
কৃষিবিদদের মতে, জমির উপরিভাগের চার থেকে ছয় ইঞ্চি (টপ সয়েল) গভীরের মাটিতেই মূল পুষ্টিগুণ থাকে। মূলত মাটির এই স্তরে ফসল উৎপাদিত হয়।
মাটির এই স্তর কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়। এজন্য অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। তাছাড়া কৃষিজমি ওপরের এ টপ সয়েল হারিয়ে ফেললে তা স্বাভাবিক হতে প্রায় ১০-১২ বছর লাগে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানে উপস্থিত একাধিক কৃষক জানান, অবৈধভাবে মাটি ও বালু কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেই বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। পদ্মার পাড় থেকে রাতের আঁধারে প্রতিনিয়ত মাটি কাটে তারা।
রতভর চলে তাদের কর্মযজ্ঞ। এভাবে চলতে থাকলে বর্ষায় আমাদের ভিটে-মাটি হারিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে সদরপুরের পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন এলাকা নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বসতভিটা হারিয়েছেন কয়েক শ পরিবার। আর এখন শুষ্ক মৌসুমে পদ্মাপাড়ের মানুষের নতুন আতঙ্ক মাটি ব্যবসায়ীরা। পদ্মার ভাঙন ও মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) ২০১৩ অনুযায়ী কৃষিজমির মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ আইন প্রয়োগ করবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, আমরা নিয়মিত মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। পদ্মার পাড় থেকে রাতের আঁধারে মাটি কাটার ঘটনা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। পদ্মার চর দুর্গম এলাকা হওয়ায় ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অভিযানের পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছি।