সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

দুই পরিবারের জন্য সরকারি টাকায় দুটি সেতু নির্মাণ

প্রকাশিতঃ ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪  

বিশেষ ,প্রতিবেদকঃ সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের দুই পরিবারের জন্য সরকারি টাকায় দুটি সেতু নির্মাণ করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ওই দুটি সেতু এলাকার অন্য কারও কাজে আসবে না। কেননা, সেতুর পর রাস্তা আছে ওই দুই বাড়ি পর্যন্তই। এতে সরকারের কয়েক লাখ টাকা অপচয় হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের এপিএস হাসনাত হোসেন ও তাঁর ভাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নূর হোসেনের ফার্মেসিতে চাকরি করেন এক পরিবারের সন্তান। ক্ষমতাসীন দলের লোকদের সঙ্গে সখ্য থাকায় সেতুর বরাদ্দ বাগিয়ে এনেছেন তাঁরা।

প্রকল্প ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাওরের মানুষের যাতায়াতের সুবিধায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ১২টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে; যার মধ্যে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার প্যাকেজে ৪টি সেতু বাস্তবায়ন করছেন ঠিকাদার বিপ্লব দে। এই প্যাকেজের আওতায় পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের দেববাড়ীর নিখিল দেবের বাড়ি ও অ্যাডভোকেট রাধাকান্তের বাড়ির সামনে পৃথক সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দে এ দুই সেতু শুধু দুটি পরিবারের চলাচলের জন্য মালিকানাধীন জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে।

পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের দেববাড়ী এলাকায় দেখা গেছে, নিখিল দেবের বাড়ির সামনে যে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে, সেই সেতুর প্রায় ৭০০ মিটার দূরে রয়েছে পুরোনো আরেকটি সেতু।

জোছনা রানী দেব নামের এক নারী বলেন, ‘আমরা সবাই আগের ব্রিজ দিয়ে যাই। এই সেতু কেবল নিখিলদের পরিবারের কাজে লাগবে। তারা এক পরিবারে চার ভাই; তারাই কেবল যাতায়াত করবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, ‘এই সেতু নিখিলদের মালিকানা জায়গায় হচ্ছে। তারা নিষেধ দিলে কেউ চলাচল করতে পারবে না। তা ছাড়া একটা পরিবারের জন্য সরকারের এত টাকা বরাদ্দ দেওয়ার রহস্য বুঝতে পারছি না।’

দেববাড়ীর এক প্রতিবেশী বলেন, ‘শুনেছি, তাঁরা সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের রাজনৈতিকভাবে পরিচিত এবং নিখিল দেবের ভাতিজা রিপন দেবনাথ শান্তিগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নূর হোসেন ও মন্ত্রীর এপিএস হাসনাত হোসেনের ফার্মেসিতে কাজ করেন। প্রভাব খাটিয়েই তারা এখানে ব্রিজটা করছে।’

এদিকে শুক্রমর্ধন এলাকার রাধাকান্তের বাড়ির সামনে যে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে, সেটিও তাঁদের মালিকানাধীন জায়গায়। এই সেতুতে চলাচলের দৃশ্যমান কোনো সড়ক নেই।

সজিব আহমদ নামে স্থানীয় একজন বলেন, এই সেতু শুধু দু-একটি পরিবারের জন্য। বাকি মানুষদের রাস্তা সামনে দিয়ে রয়েছে। এলাকায় অনেক গ্রাম ও পাড়া রয়েছে, যেখানে সেতুর প্রয়োজন।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, ‘রিপন দেবনাথ আমার ফার্মেসিতে কাজ করে, এটা সত্য। তবে তার বাড়ির সামনে কোনো ব্রিজের কাজ হচ্ছে না; যেটি আছে সেটি ১০ বছরের পুরোনো। এসব ছাড়াও আমি কোনো ব্রিজের জন্য তদবির বা স্বজনপ্রীতি করিনি। এটি আমার কাজের বিষয়ও না।’

এদিকে ব্রিজটির বিষয়ে নিখিল দেব ও অ্যাডভোকেট রাধাকান্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

সেতুগুলো স্থানীয় লোকজনের চাহিদার ভিত্তিতে নির্মাণ করা হচ্ছে দাবি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন ভুঞা বলেন, ‘সেতু সম্পর্কে কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। এই সেতুগুলো দিয়ে অনেক পরিবার যাতায়াত করবে।’

দেববাড়ীতে একটি সেতু থাকার পরও আরেকটি সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সাহাদাত হোসেন বলেন, পারিবারিক কলহের কারণে ওই সেতু দিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তাই এই পরিবারগুলোর যাতায়াতের সুবিধার্থে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

সেগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন জানিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, যাঁরা নিজেদের জায়গায় ব্রিজগুলো করতে দিয়েছেন, তাঁরা লিখিত অঙ্গীকার দিয়েছেন, ব্রিজগুলো সর্বসাধারণ ব্যবহার করতে পারবে।