সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

নৌকার পক্ষে বৈঠক,৩৫ শিক্ষককে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি

প্রকাশিতঃ ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩  

অনলাইন ডেস্ক: মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের নিয়ে নৌকার পক্ষে বৈঠক করায় ৩৫ জন শিক্ষককে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে মাদারীপুর-২ (রাজৈর ও সদরের একাংশ) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বাড়িতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানরাও উপস্থিত ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই সভার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তিন মিনিট তিন সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, মাদারীপুর-৩ আসনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের উদ্দেশে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের ছোট ভাই ওবায়দুর রহমান খান বক্তব্য দিচ্ছেন। পাশে বসা ছিলেন শাজাহান খান।

ওবায়দুর রহমান খান তার বক্তব্য বলেন, ‘আপনাদের প্রাণপ্রিয় নেতা শাজাহান খান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্বারা নির্দেশিত হয়েছেন, তিন (মাদারীপুর-৩) আসনের ওপরে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য এবং তিনের (মাদারীপুর-৩) প্রচার চালানোর জন্য। সেই হিসেবে আমরা তিনের ওপরে বেশি দায়িত্ব পালন করছি। আপনারাও তিনে সেইভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনে যদি আমার গোলাপ ভাইকে নির্বাচিত করতে পারি, তাহলে দাদায় (শাজাহান খান) ও গোলাপ ভাই মিলে দীর্ঘদিনের জন্য মাদারীপুরকে স্থিতিশীলতায় নিয়ে আসতে পারবেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে সভার কথা বলে উপজেলা চেয়ারম্যান হঠাৎ আমাদের তাদের বাসায় ডেকেছেন। তিনি আমাদের মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষক সমাজের সভাপতি। সভাটি হওয়ার কথা ছিল উপজেলা পরিষদে, কিন্তু সেখানে না হয়ে এমপি (শাজাহান খান) মহোদয়ের বাসায় হয়েছে।’

এই বিষয়ে মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থক ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘মাদারীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাজাহান খান তার নির্বাচনি এলাকার পছন্দের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রিজাইডিং ও পোলিং এজেন্ট করার অপচেষ্টা করছেন। যেহেতু সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন আমাদের মাদারীপুর-৩ আসনের মধ্যে পড়েছে। তাই তিনি সেখানে নিজের প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। আমরা ইতোমধ্যে শাজাহান খানের নির্বাচনি এলাকার কোনও লোককে প্রিজাইডিং ও পোলিং এজেন্ট হিসেবে যাতে নিয়োগ করা না হয়, সেজন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। আর ২৬ ডিসেম্বর শাজাহান খানের বাসায় যেসব শিক্ষক মিটিং করেছেন, তারা সবাই শাজাহান খানের কর্মী। তারা নির্বাচনে কোনও দায়িত্ব পালন করলে সেখানে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই তাদেরসহ আরও যারা আছেন, সবাইকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে অন্য জায়গা থেকে পোলিং ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলে আশা করি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।’

এই বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদ করিম বলেন, ‘যারা ওই মিটিংয়ে ছিলেন তাদের আমাদের জেলা স্যার তাদের সবাইকে শোকজ করেছেন। এ বিষয়ে স্যার ভালো বলতে পারবেন।’

জেলা নির্বাচন অফিসার আহমদ আলী জানান, বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে তদন্ত করে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।