নরসিংদীতে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে একই কারখানার ৭কর্মী নিহত
প্রকাশিতঃ ২৫ আগস্ট, ২০২৩
জেলা প্রতিনিধি:নরসিংদীর শিবপুরে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের ৭ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট)দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার ঘাসিরদিয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আবুল খায়ের তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
ফায়ার সার্ভিস, হাইওয়ে পুলিশ ও নিহতদের স্বজনেরা জানান, সাভার ইপিজেড এলাকার এসবি নিটিং-এর ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী একটি ভাড়া করা মাইক্রোবাসে করে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে সিলেট যাচ্ছিলেন। মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুরের ঘাসিরদিয়া এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পাথরবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের ভেতরে থাকা পাঁচজন নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ছয়জনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে মারা যান আরও দুজন। পরে সেখান থেকে গুরুতর আহত চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সাভার ইপিজেডের এসবি নিটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মীর শেহাব উদ্দিন জাকির বলেন, ‘আমাদের কারখানার চালকসহ ১১ জন স্টাফ ভ্রমণের জন্য সিলেট যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত চারজনকে ঢাকায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
নিহতরা হলেন—টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মীর কুমুল্লী এলাকার মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক সবুজ (৩০), ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পারগোপারপুর এলঅকার আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমিন (২৯), গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল আমিন খান (২৭), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আবদুল আওয়াল (৩৭), বরিশালের মুলাদী উপজেলার মুলাদী গ্রামের মো. মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান শিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪), জামালপুর সরিষাবাড়ির ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহমেদ (৩৬) ও গাজীপুরের শারাব এলাকার নুরুল মোল্লার ছেলে বাবুল হোসেন (৩৭)।
আহতরা হলেন—সাকিব আহমেদ (২৮), পারভেজ (২৯), দোয়েল (২২) ও মিথুন (৩৫)। হতাহতরা সাভারের ইপিজেড এলাকার এসবি নিটিং লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁরা একটি মাইক্রোবাসে করে সিলেট ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন।
খবর পেয়ে রাতেই নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুর্ঘটনা কবলিত দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাস থেকে হতাহতদের উদ্ধার করেন। এই দুর্ঘটনার পর ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করে এবং চালককে আটক করে। মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে।
নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, খবর পেয়ে রাতেই দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। এর কিছুক্ষণ আগে স্থানীয়রা হতাহত অবস্থায় ছয়জনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায়।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাশার বলেন, রাত আড়াইটার দিকে প্রথমে কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে একজন মৃত ছিল, পরে আরও একজন মারা যায়। চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর পাঁচজনের মরদেহ আনা হয়। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
নরসিংদী সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ জানান, সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা সাতজনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনগতভাবে লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে দুর্ঘটনা খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, মাইক্রোবাসটি অন্য কোনো গাড়িকে পাশ কাটিয়ে দ্রুতবেগে যাওয়ার সময় ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাকটি জব্দ ও চালক আটক হয়েছে। নাসির মিয়া নামে মাইক্রোবাসের চালকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই দুর্ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।