মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে ঘুমন্ত স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা

প্রকাশিতঃ ১০ আগস্ট, ২০২৩  

অনলাইন ডেস্ক:নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী মো. মঈন উদ্দিন (৪৫) হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ।

পরকীয়া প্রেমিক নিয়ে স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী রজ্জবের নেছা রিনাকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে তার পরকীয়া প্রেমিক মো. মাসুদ (৩৫) এখনও পলাতক রয়েছেন।

নিহত মঈন উদ্দিন উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণকাটা গ্রামের ফকির বাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। চট্টগ্রামের ধনিয়ালা পাড়া এলাকায় তিনি নিজ মালিকানাধীন একটি রেস্তোরাঁ চালাতেন।

মঙ্গলবার (০৮ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে অভিযুক্ত রিনাকে আদালতে হাজির করেন সেনবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফারুক। এরপর স্বামী হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসাইনের আদালত এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এর আগে, রোববার (০৬ আগস্ট) দিনগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের হরিণকাটা গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে সোমবার (০৭ আগস্ট) রাতে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ওই ব্যক্তির মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গ্রেপ্তার রিনার বরাত দিয়ে সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী জানান, নিহত মঈন উদ্দিন তার ব্যবসার কাজে প্রায় চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন। এ সুযোগে গত ২-৩ বছর ধরে তার স্ত্রী রিনা বাড়ির পাশের প্রতিবেশী যুবক মাসুদের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।এর মধ্যে তারা পরস্পর অসংখ্যবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়।

ওসি বলেন, একপর্যায়ে বছর খানেক আগে রিনাকে তার স্বামী ডিভোর্স দিয়ে দেন। ডিভোর্স দেওয়ার কারণে তিনি বাবার বাড়ি চলে যান। পরে তাদের সংসারে তিনটি সন্তান থাকায় তাদের দিকে তাকিয়ে রিনাকে আবারও সামাজিকভাবে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এর পরেও তার চরিত্রের পরিবর্তন ঘটেনি।

ওসি আরও জানান, এরপরও বিভিন্ন সুযোগে রিনা তার পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক চালাতে থাকেন। স্ত্রীর পরকীয়ার জের ধরে মাসুদের সঙ্গে নিহত মঈন উদ্দিনের বড় ধরনের শক্রতা সৃষ্টি হয়। ফলে পরকীয়া প্রেমিক মাসুদ একাধিকবার তাকে হত্যার হুমকি দেন। মঈন উদ্দিন বাড়িতে এলে বিষয়টি সহ্য করতে পারতেন না পরকীয়া প্রেমিক। এই জন্য তাকে মেরে ফেলার জন্য রিনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে মাসুদ। এরপর গত ৩-৪ দিন আগে এই নিয়ে পরকীয়া প্রেমিকসহ পরিকল্পনা করেন রিনা।

নিহত মঈন গ্রামের বাড়িতে এলে নিয়মিত গরুর দুধ পান করতেন। ঘটনার আগের দিন পরকীয়া প্রেমিক রিনাকে ১৪-১৫টি ঘুমের ওষুধ দেন। পরে গত রোববার রাত ৯-১০টার দিকে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে তিনি তার স্বামীকে সবগুলো ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। এতোগুলো ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে তিনি অচেতন অবস্থায় ঘুমিয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে রাত ৩টার দিকে পরকীয়া প্রেমিক মাসুদ ও রিনা তাকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির উঠানে নিয়ে মাথায় কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে বাড়ির উঠানে স্বামীকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে ঘরে ঢুকে উল্টো নাটক সাজান ঘাতক স্ত্রী।

জানা গেছে, এ ঘটনায় ভিকটিমের মা রাহেলা আক্তার (৬০) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সেনবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনার ১৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে নোয়াখালী চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে। একই সঙ্গে হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয়।