সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

স্ত্রীকে হত্যার পর স্ট্যাটাস‘‘বিশ্বাসঘাতক বেঈমান এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই

প্রকাশিতঃ ১৬ মে, ২০২৩  

অনলাইন ডেস্ক: ঝালকাঠিতে পরকীয়ার অভিযোগে স্ত্রী সায়মা পারভীন তানহাকে (২০) ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আলী ইমাম খান অনুর বিরুদ্ধে। 

সোমবার (১৫ মে)সকাল ১১টার দিকে ঝালকাঠি ইকো পার্কে এ ঘটনা ঘটে। স্ত্রীকে হত্যা করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন অনু।  নিহত সায়মা পারভীন তানহা ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। সে শহরের টিনপট্টি সড়কের শাহাদাত তালুকদারের মেয়ে। পরিবারের অমতেই দু’জনে ২০২১ সালে তারা বিয়ে করে। হত্যার পরে অনু তার নিজ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ‘বিশ্বাসঘাতক বেঈমানের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই, এজন্য নিজেই নিজের হাতে বউটাকে পরম করুণাময়ের কাছে চিরতরে পাঠিয়ে দিলাম…। পরপারে ভালো থেকো বউ পরকীয়ার মজা এইবার অন্তত বুঝলা’। এরপরেই থানায় গিয়ে অত্মসমর্পণ করেন।

পুলিশ জানায়, ঝালকাঠি শহরের ফকিরবাড়ি এলাকার দলিল লেখক দিদার হোসেন নান্নার ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আলী ইমাম খান অনু দুই বছর আগে গোপনে বিয়ে করে প্রতিবেশী সায়মা পারভীন তানহাকে। সম্প্রতি মেয়েটি ফেসবুকে অন্য এক যুবকের সঙ্গে চ্যাটিং করতো। বিষয়টি জানতে পারে অনু গতকাল রবিবার রাতে নিজের ফেসবুকে স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত লিখে স্ট্যাটাস দেয়। সোমবার সকাল ১১টার দিকে স্ত্রীকে ফোনে ইকো পার্কে ডেকে আনে অনু ছুরি দিয়ে স্ত্রীর পেটে ও বুকে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরে অনু তার ফেসবুকে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে স্ট্যাটাস দিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

অনুর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-‘সুদীর্ঘ সাড়ে চার বছরের ভালোবাসা ছিল আমাদের…, আলহামদুলিল্লাহ মুসলিম শরীয়াহ অনুযায়ী আমরা দু’জন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম, ভেবেছিলাম সারাজীবন হয়তো একসাথে থাকবো….।

কিন্তু বড়ই আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তির আবির্ভাব হয়, অতঃপর আমার বউ ধীরে ধীরে আমার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে আমাকে কেমন জানি এড়িয়ে যেতে থাকে। একদম হুট করেই কোনো প্রকার কোনো অপরাধ ছাড়াই আমাকে ছেড়ে চলে যায়….।

আমার বউটা তার মামাতো ভাইয়ের সাথে সারারাত চ্যাটিং করতো তার নাম Asif Iqbal, সে আমার বউয়ের সাথে যত প্রকার Sexual আলাপ আলোচনা বলেন সব কিছু সবার অগোচরে চালিয়ে গেছে…। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে জানেন তো? চোরের দশদিন আর গেরস্তের একদিন!

আমাদের বেলায়ও ঠিক ঘটেছে তাই আমার বউ আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি….।
সন্দেহের বশবর্তী হঠাৎ ১৩/০৫/২০২৩ তারিখে সন্ধ্যার অনেক পরে বাসায় আসতে দেখি সামনে দাঁড়িয়ে তার পথ আটকিয়ে তার হাত থেকে ফোন নিয়ে যাই, তারপর সে আমাকে চোরের মতো বার বার অনেক কসম করে অনেক অনুনয় বিনয় করে আমার কাছে ফোন ফেরত চায়, আর বলে যে সে নাকি ম্যাসেজ ডিলেট করবে না! ব্যাপারটা আমি মোটেও বিশ্বাস করলাম না তাকে বাসায় যেতে বলে আমিও বাসায় চলে এলাম বিশ্বাস করেন ভাইয়েরা আমার সারারাত একফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি আমার বউয়ের পরকীয়া প্রেমিকের অশালীন ম্যাসেজ দেখে আর বউয়ের সুড়সুড়ি জাগানিয়া রিপ্লাই দেখে….। আমার বউ সব সময় আমার সামনে হুজুর সেজে থাকতো এমন আচরণ করতো মনে হয় যেন সে ভাজা মাছটাও উলটে খেতে পারে না….। কিন্তু আজ হঠাৎই আবিষ্কার করলাম আমার বউয়ের আসল ফুটফুটে চরিত্র…, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি তুমি তোমার বুকে ওড়না ছাড়া তোমার মামাতো ভাইকে ছবি দিয়েছো কেন? জবাবে সে বলে, খোদার কছম আমি এমনিই দিয়েছি! তারপর আমি যখন তাদের ফ্রিলি কথাবার্তা বলার টপিক সম্পর্কে একটা প্রশ্ন প্রশ্ন করতে থাকি তখন সে তার কোনো উত্তর দিতে পারে না, বলে আমার সাথে নাকি তার সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে! এরপর হঠাৎ করেই দেখি সে তার আইডির পাসওয়ার্ড চেইঞ্জ করে ফেলেছে! তারপর আমিও আবার রিকভারি দিয়ে আইডিতে ঢুকি ততক্ষণে সে অনেক ছেলেদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ অনেক চ্যাটিং ডিলেট করে ফেলেছে, আমি যেন তার কিছুই না দেখতে পারি সেজন্য কিন্তু সে অন্য সবার ম্যাসেজ ডিলেট করতে গিয়ে সে তার নতুন প্রাণ ভ্রমরার ম্যাসেজ ডিলেট করতে পারেনি। তার আগেই আমি আইডি রিকভারি করতে সক্ষম হয়েছি এবং স্ক্রিনশট রাখতে  সক্ষম হয়েছি। কিছুক্ষণ পর সে তার মায়ের নাম্বার থেকে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে নারী নির্যাতন আইনে আইসিটি আইনে সে নাকি আমার জীবন ধ্বংস করে দিবে…। আ আ আ ওমা একি বলে চুতমারানি? এতো দেখছি নির্ঘাত চোরের মায়ের বড় গলা!

তারপর অনেক ভেবেচিন্তে আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম বিশ্বাসঘাতক বেঈমানের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। এজন্য নিজেই নিজের হাতে বউটাকে পরম করুণাময়ের কাছে চিরতরে পাঠিয়ে দিলাম…, পরপারে ভালো থেকো বউ, পরকীয়ার মজা এইবার অন্তত বুঝলা…।’

এ বিষয়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মহিতুল ইসলাম বলেন, অনু নিহত তানহাকে ডেকে নিয়ে ইকো পার্কের নদীর পাড়ে নিয়ে চাকু দিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পরপরই অনু পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অনুকে আটক করা হয়েছে। নিহতের পেটে ও বুকে চারটি ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। তানহার পার্স ব্যাগ থেকে একটি প্যাকেট করা চাকু পাওয়া গেছে। ইকো পার্ক থেকে ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি।