ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতরের বৃহৎ জামাত অনুষ্ঠিত
প্রকাশিতঃ ২২ এপ্রিল, ২০২৩
জেলা প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে লাখ লাখ মুসুল্লীর অংশগ্রহণে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ-উল-ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার(২২এপ্রিল)সকাল ১০ টায় শুরু হওয়া এবারের জামাতে প্রায় তিন লাখ মুসুল্লী একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন বলে জানিয়েছেন ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। ১৮২৮ সনে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম জামাতের হিসাবে শোলাকিয়া ময়দানের এবারের জামাত ছিল ১৯৬তম ঈদ জামাত।
দেশের সর্ববৃহৎ এ জামাতে অংশগ্রহণ করতে সকাল থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহের উদ্দেশ্যে। জামাত শুরুর আগেই সাত একর আয়তনের শোলাকিয়া মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়। আগত মুসল্লিদের অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববতী রাস্তা, তিনপাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও শোলাকিয়া সেতুতে জায়গা করে নিয়ে জামাতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়েন।
মাঠের সুনাম ও জনশ্রুতির কারণে ঈদের বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সারাদেশের বিভিন্ন জেলা তথা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, যশোর, খুলনা ও চট্রগ্রামসহ অধিকাংশ জেলা থেকে শোলাকিয়ায় মুসল্লিদের সমাগম ঘটে।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এবারের ঈদ জামাতে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ মুসুল্লী ঈদ জামাত আদায় করেছেন। তিনি তার বক্তব্যে দেশ ও জাতির উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর সংহতি ও ঐক্য কামনা করেন। এছাড়া দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য মঙ্গল কামনা, পাপ থেকে মুক্তির জন্য এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার মাগফেরাত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার) জানান, ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার কথা মাথায় রেখে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নামাজের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব. আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোষাকে নজরদারি করেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এছাড়াও মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে ছিল সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার।
ঈদের জামাত পরিচালনা করেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে তিনবার বন্দুকের গুলি ফুটিয়ে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সঙ্কেত দেওয়া হয়। জামাতের পর খুতবা পাঠ শেষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে দোয়া পরিচালনা করা হয়। ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে চলাচল করেছে ২টি স্পেশাল ট্রেন। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসে।
জামাতকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারিতে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মাঠের চারপাশে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। মাঠের ৩২টি প্রবেশ পথে চেকপয়েন্ট বসিয়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করা হয়।
ঈদ জামাত শুরুর আগে ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার), কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ পারভেজ মিয়া ও ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী মুসল্লিদের স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
এ ঈদ জামাতকে উপলক্ষ করে জেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মুসল্লিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মাঠ সংলগ্ন রাস্তায় তোরণ নির্মাণ, ব্যানার-ফেস্টুন টানানো, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, জরুরী স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি ও কর্মব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মত।
শত ব্যস্ততা, নানা সমস্যা আর প্রাকৃতিক বৈরিতাকে উপেক্ষা করে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ধনী-গরীব সকলে নামাজ আদায় করেন শোলাকিয়া ঈদ জামাতে। তাদের সবার উদ্দেশ্য একটাই যেন কোন অবস্থাতেই হাত ছাড়া হয়ে না যায় জামাতে অংশগ্রহণ, পাপ থেকে মুক্তি আর আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ। ধনী-গরীবের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সাম্য ও সুন্দরের ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ গড়ার এই শিক্ষা নিয়েই জামাত শেষে বাড়ির পথে শোলকিয়া ছাড়েন তারা।