ঝিনাইদহে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীর কাছে ৫ হাজার ভোটে হারলো নৌকা
প্রকাশিতঃ ২৮ নভেম্বর, ২০২১
জেলা প্রতিনিধি।ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া চেয়ারম্যান প্রার্থীর কাছে নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বড় ব্যবধানে পাশ করেছেন নজরুল ইসলাম ঋতু। তার প্রতিক ছিল আনারস। এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নজরুল ইসলাম ছানা ও হাতপাখ প্রতিকের মাহবুবুর রহমান।
ভোটে আনারস প্রতিকে নজরুল ইসলাম ঋতু ৯৫৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি নৌকা প্রতিকের নজরুল ইসলাম ছানা পেয়েছেন ৪৫১৭ ভোট। ওই ইউনিয়নের ১০ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজয়ী চেয়ারম্যান ঋতু উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের সন্তান। তার আরো তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিন ভাই ঢাকাতে থাকেন এবং বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে। জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গ প্রকাশ পাওয়ায় ৭ বছর বয়সে তাকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা চলে যেতে হয়। সামান্য লেখাপড়া করলেও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রাথমিকের গন্ডি পেরোনো হয়নি। ছোটবেলা থেকেই ঢাকার ডেমরা থানাতে তার দলের গুরুমার কাছেই বেড়ে উঠা। এখন তার বয়স ৪৩ বছর। গুরুমার পরের দ্বায়িত্বটা সে দেখভাল করেন।
ঢাকাতে থাকলেও পরিবারের টানে প্রায়ই বাড়িতে আসেন। তার কষ্টার্জিত জমানো অর্থ দিয়ে বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে জন্মস্থান দাদপুর গ্রামসহ ইউনিয়নবাসীর উন্নয়নে আর্থিক সহযোগীতা করছেন। এ পর্যন্ত তার এলাকায় দুইটি মসজিদ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন মন্দিরের উন্নয়নে দান করেছেন অর্থ। এলাকার কেউ অসুস্থ বা কন্যাদায়গ্রস্থ হয়ে তার কাছে গিয়ে কখনো বিমুখ হতে হয়নি। কয়েক বছর আগে গ্রামের বাড়ি দাদপুরে তার পিতার জমিতেই বানিয়েছেন একটি পাকা বাড়ি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, সত্যি কথা বলতে নির্বাচন কি তা বুঝিনি। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে দাড় করিয়েছিল। আমার পরিবারের সবাই আওয়ামীগ করে। আমার বাবার মারা যাওয়ার সময় বলেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন। তাই যতদিন তোরা বেঁচে থাকবি আওয়ামীলীগের বাইরে যাবি না, নৌকায় ভোট দিবি। প্রয়াত বাবার কথায় নৌকায় ভোট দিলেও কখনো সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করা হয়নি।
কথা প্রসঙ্গে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের বিজয়ী এই প্রার্থী বলেন, আর দশজন স্বাভাবিক নারী পুরুষের মত না হলেও আমার কোন দুঃখ নেই। আল্লাহ আমাকে সুস্থ্যভাবে পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রেখেছেন এতেই আমি সন্তুষ্ট। সবথেকে বেশি কষ্ট পায় যখন শুনি আমার এলাকার কেউ অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না অথবা মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না। এমন সংবাদ পেলেই আমার সাধ্য মত চেষ্টা করি তাদের পাশে দাড়াতে।
এর আগে গত উপজেলা নির্বাচনে পাশর্^বতী উপজেলা কোটচাদপুরের পিংকি খাতুন নামে এক হিজড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে দেশের মধ্যে তৃতীয় লিংগের প্রথম জনপ্রতিনির স্বীকৃতি পায়।