মোবাইল চুরির অভিযোগে শিশু নির্যাতন
প্রকাশিতঃ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
জেলা প্রতিনিধিঃ মাদারীপুর জেলার শিবচরে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে মেহেদী হাসান (১৪) নামের এক কিশোরকে নির্মমভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বাড়ির উঠানে লোহার শিকল দিয়ে বেধে রেখে দুই ধরে এ নির্যাতন করেন শিবচর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিএম দেলোয়ার হোসেনের ছোট ভাই কামরুল হোসেন। এই ঘটনায় অভিযুক্তকে রাত সারে আটার দিকে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের রহমআলী বেপারীরকান্দি গ্রামে।
নির্যাতনকারী এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় নির্যাতিত মেহেদীর পরিবার এ ঘটনা পুলিশকে জানাতে সাহস করেনি।
গোপন সংবাদ পেয়ে শিবচর থানা পুলিশ রবিবার সন্ধ্যায় হাতে পায়ে ও গলায় শিকল দেওয়া অবস্থায় মেহেদীকে উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
স্থানীয়, পারিবারিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিবচরের কাদিরপুর ইউনিয়নের পার্শ¦বর্তী শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার বি.কে নগর পশ্চিম কাজী কান্দি গ্রামের মনোয়ার খাঁনের ছেলে মেহেদী হাসান একজন ডিস লাইনের কর্মী। সে বিভিন্ন গ্রামে ডিস লাইনের সংযোগ দিতো এবং মেরামতের কাজ করতো সে।
ডিসকর্মী মেহেদী হাসান ঈদের আগে উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান বি এম দেলোয়ার হোসেনের ছোট ভাই কামরুল হোসেন বেপারীর ঘরে ডিস লাইনের কাজ করে। এরপর ঐদিন কামরুল হোসেন বেপারীর ২টি মোবাইল সেট হারিয়ে যায়। তাই তারা ডিসকর্মী মেহেদী হাসানকে সন্দেহ করে।
এরই জের ধরে গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে কামরুল হোসেন বেপারী ডিস লাইনের কাজ করার কথা বলে মেহেদী হাসানকে বাড়িতে ডেকে আনে। মেহেদী হাসান এলে তাকে মোবাইল চুরির অভিযোগে মারধর করে। একপর্যায় একটি বদ্ধ ঘরে হাত-পায়ে ও গলায় লোহার শিকল বেঁধে আটকে রাখে।
পালাক্রমে উঠোনের একটি কামরাঙ্গা কাছের সাথে বেধে ২দিন ধরে শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এই অমানবিক ঘটনা ঘটলেও প্রভাবশালী কামরুল বেপারীর ভয়ে নির্যাতিত মেহেদী হাসানের বাবা-মা পুলিশকে জানাতে সাহস পায়নি।
স্থানীয়ভাবে পুলিশ খবর পেলে রবিবার সন্ধ্যার দিকে মেহেদীকে উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এই ঘটনায় পুলিশ কামরুল হোসেন বেপারীকে আটক করতে গেলে তার বড় ভাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বি এম দেলোয়ার হোসেন ছাড়িয়ে রাখে। এরপর থেকে সে পলাতক ছিল তবে রাত সারে আটার দিকে কতুবপুর এলাকা থেকে কামরুলকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে উদ্ধারকারী শিবচর থানার এস আই জাকির হোসেন ও আলমগীর হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে আমরা দ্রুত কামরুলের বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে তার বাড়ির একটি কামরাঙ্গা কাছের সাথে হাত-পা ও গলায় লোহার শিকল পড়া অবস্থায় দেখতে পাই। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। তার অবস্থা গুরুতর।
এ ব্যাপারে মেহেদী হাসানের মা পারুল বেগম বলেন, আমরা অনেক গরীব মানুষ। ওরা প্রভাবশালী। তাই ভয়ে পুলিশকে কিছু বলতে সাহস পাইনি। কারন ওরা আমার ঘর-বাড়ি জ¦ালিয়ে দিবো বলে হুমকি দিয়েছে। তাছাড়া এখনও মামলা করতে সাহস পাচ্ছি না। কারণ ওরা বলেছে মামলা করলে আমাদের মেরে ফেলবে। মেহেদীর বাবা মনোয়ার খানও মামলার করার ব্যাপারে একই কথা বলেন।
অভিযুক্ত কামরুল বেপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাদিয়া তাসনিন মুনমুন বলেন, মেহেদী হাসানের পায়ের নিচের দিকে অনেক ক্ষত রয়েছে। তাছাড়া তার সারা শরীরেও অনেক আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। তাই মেহেদীর এক্সরেসহ পরীক্ষা নিরাক্ষা চলছে।
শিবচর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বেপারী বলেন, আমার ভাই কামরুল হাসানের ২টি মোবাইল চুরি হয়েছে। তাই সে চোরকে ধরে জিজ্ঞাসা করেছে। এসময় জিজ্ঞাসা করলে মেহেদী চুরি করা মোবাইল বিভিন্ন স্থানে রেখেছে বলে জানায়। তাই আমার ভাই মেহেদীকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি। তবে মেহেদীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। আইনের হাতে তুলে দেয়া উচিত ছিলো।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।’