বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের শাহাদাত বার্ষিকী আজ
প্রকাশিতঃ ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ যাদের আত্মত্যাগ আর বীরত্বে নির্মিত হয়েছে স্বাধীন দেশের পতাকা তাদের মধ্যে অন্যতম বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ। মহান মুক্তিযুদ্ধে আহত সহযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়ে শত্রুর সঙ্গে প্রাণপণ লড়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা এই অকুতোভয় বীরের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ।
১৯৭১ সালের এই দিনে (৫ সেপ্টেম্বর) যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন রণাঙ্গনের লড়াকু সৈনিক নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডীবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যা বর্তমানে নূর মোহাম্মদনগর নামে পরিচিতি লাভ করেছে। দিনটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচী নিয়েছে নড়াইল জেলা প্রশাসন।
জানান সোমবার সকালে নড়াইল জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নূর মোহাম্মদ এর গ্রামের বাড়িতে কোরানখানি ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার স্মৃতিসৌধে পুস্পমাল্য অর্পণ ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ, জেলা পরিষদের প্রশাসক সুবাস চন্দ্র বোস, পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, নড়াইল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাছিমা খাতুন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মোল্যা কওছার উদ্দিন, কাজী হাফিজুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরদার আব্দুল মজিদ, কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র/ছাত্রীবৃন্দ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
নূর মোহাম্মদের বাবার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ এবং মার নাম জেন্নাতুন্নেছা। মতান্তরে জেন্নাতা খানম।
বাল্যকালেই তিনি বাবা-মাকে হারান। লেখাপড়া করেছেন সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত। এরপর ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (সাবেক ইপিআর, বর্তমানে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ-বিজিবি) যোগদান করেন।
দিনাজপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই বদলি হন যশোর সেক্টরে। পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পান। মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে অংশগ্রহণ করে দেশ মাতৃকায় যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নড়াইলের এ সাহসী সন্তান (নূর মোহাম্মদ)। এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্ণেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিলেন মেজর এস এ মঞ্জুর। এদের নেতৃত্বেও প্রাণ-পণ লড়েছেন নূর মোহাম্মদ।
৫ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর গুলিতে নূর মোহাম্মদের সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হন। আহত সহযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়েই এলএমজি হাতে শত্রু পক্ষের সাথে যুদ্ধ করেছেন। গুলি ছুঁড়েছেন। হঠাৎ করে পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে নূর মোহাম্মদের হাঁটু ভেঙ্গে যায়। তবুও গুলি চালান। প্রিয় মাতৃভূুমিকে শক্রমুক্ত করার জন্য। জীবন প্রদীপ নেভার শেষ পর্যন্ত প্রাণপণ চেষ্টা শহীদ হন।
এ বীরের সম্মানার্থে নড়াইল শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ চত্বরে ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরৗ এ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন।