মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

১০০০ টাকা ঘুষ দিলে ১৫০০ টাকা সাহায্য পাবে বন্যার্ত ভিক্ষুক

প্রকাশিতঃ ২৩ আগস্ট, ২০১৬  

ডেস্ক রিপোর্টঃ ‘ভিক্ষা করি পাঁচশ ট্যাকা দিনু, তাও তালিকাত মোর নাম উঠল না, পরে দ্যানা করি আরো পাঁচশ ট্যাকা দিনু তেসনি মোর নাম উঠিল। চোখে-মুখে ঘৃনা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ৫০ বছর বয়সী সাহিনা নামের এক ভিক্ষুক। আর আব্দুর রহিম নামে ৬২ বছরের এক বৃদ্ধতো বলেই ফেললেন, ‘ভিটে মাটি হারা মানুষের কাছ থেকে যারা ঘুষ নেয় তারা মানুষ না, জানোয়ার’!জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সহায়তা বাবদ নগদ দেড় হাজার টাকাসহ পাঁচ হাজার টাকার বেশি মূল্যের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার কথা। জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি’র সহায়তায় এসব পণ্য পেতে বন্যার্তদের কাছ থেকে এক হাজার করে টাকা ঘুষ নেয়া হয়। টাকা দিলেই ওই অর্থ পাওয়ার কথা বন্যার্তদের। কিন্তু চাহিদার পুরো এক হাজার টাকা কর্তা ব্যক্তিদের হাতে দেয়া হলেও মিলেছে মাত্র ১৫০০ টাকা। প্রতিশ্রুত বাকি ত্রাণ সামগ্রী কবে দেয়া হবে তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।
ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে সোমবার দুপুরে মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম্য আদালতে পৃথক ১৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। জমা পড়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, কয়েক দফা বন্যায় ও অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মাঝে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি ও সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তালিকা প্রণয়ন করে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি মহিষখোচা ইউনিয়নে একশ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করে। ত্রাণ বিতরণে তালিকা তৈরির দায়িত্ব পান মহিষখোচা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি’র ছেলে ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রিসোর্স সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক আলমগীর হোসেন আলম। তার সহযোগী ছিলেন ওই এলাকার নিকিল চন্দ্রের ছেলে স্বপন চন্দ্র।
অভিযোগকারীরা জানান, আলম ও স্বপন বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানায় লালমনিরহাট রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের পাঁচ হাজার টাকার ত্রাণ দিবে। এজন্য তারা তালিকা করতে এসেছেন। এ তালিকায় নাম লেখাতে চাইলে জনপ্রতি এক হাজার করে টাকা লাগবে। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে এই টাকা দিয়ে বরাদ্দ নিতে হবে। এমন আশ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তাদের এক হাজার করে টাকা দেন।
সম্প্রতি মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে রেডক্রিসেন্টের ওই ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এ সময় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে নগদ দেড় হাজার টাকা ও কিছু খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ত্রাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।
অভিযোগকারী হামিজ (৬০), হাজরা বেগম (৫৫) ও পিয়ার জাহান (৬২) জানান, তাদেরকে বলা হয়েছিল তিন কিস্তিতে দেড় হাজার টাকা, ৩০ কেজি চাল ও ডাল, তেল, শাড়ি, লুঙ্গিসহ অনেক কিছুই দেয়া হবে। তবে সব মিলে ৫/৭ হাজার টাকার ত্রাণ দেয়ার কথা বলে জনপ্রতি এক হাজার করে টাকা নেন আলমগীর ও স্বপন।
অভিযোগের বিষয়ে আলমগীর হোসেন জানান, ‘জোর করে নয়, অনেকে খুশি হয়ে এক-দুইশত টাকা দিয়েছেন। কারও কাছ থেকে ত্রাণের বিনিময়ে টাকা নেয়া হয়নি।’
জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বাদল আশরাফ জানান, ‘যার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে তিনি রেডক্রিসেন্টের কেউ নন। রেডক্রিসেন্ট ফ্রি সেবা দেয়। কোনো বিনিময় নেয় না।’
ঘুষজানতে চাইলে মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, গ্রাম্য আদালতে হাজির করে অভিযুক্তদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।