মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ভৈরবে অনুমোদনহীন কারখানায় মানহীন মশার কয়েল

প্রকাশিতঃ ১৫ জানুয়ারি, ২০১৬  

নিজস্ব প্রতিবেদকঃভৈরবে প্রায় অর্ধশত অনুমোদনহীন মশার কয়েল কারখানায় প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে মানহীন কয়েল। এসব কারখানায় মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর কীটনাশক দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মশার কয়েল।

থানীয় কারখানাগুলোর ৮/১০টিতে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের ট্রেড মার্ক দিয়ে কয়েল উৎপাদন হলেও বেশির ভাগ কারখানায় চায়নাসহ দেশে বিদেশি তৈরি নামি দামি কয়েল কোম্পানির লেভেল নকল করে বাজারে বিক্রি করছেন তারা। ভৈরবের এসব অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি বা কোনো মনিটরিং নেই। ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো মশার কয়েল কারখানা শহর এলাকার তাঁতারকান্দি, লক্ষ্মীপুর, কমলপুর, নিউ টাউনসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভৈরব এলাকায় আবেদীন কেমিকেল, ইয়াকুব অ্যান্ড মাহাবুব কেমিকেল, মালেক অ্যান্ড কোং, বশির কেমিকেল, কিসমত কেমিকেল এই পাঁচটি কয়েল কারখানার অনুমোদন রয়েছে। অপর ৪০/৪৫টি কারখানা অনুমোদনহীনভাবেই নিম্নমানের রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে প্রতিদিন কয়েল উৎপাদন করে বাজারজাত করা হচ্ছে।

ডাক্তারদের মতে এসব নিম্নমানের কয়েল মানুষ দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহার করলে দূষিত ধোঁয়ায় মানবদেহের শ্বাসকষ্টসহ কিডনি, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভৈরবের কোনো কোনো কারখানার মালিক তাদের ব্র্যান্ড বাজারজাত না করে দেশের অন্যান্য কয়েল ব্যবসায়ীদের ব্র্যান্ডের কয়েল উৎপাদন করে সরবরাহ করেন তারা। এ ক্ষেত্রে তারা শুধু মেকিং (তৈরী) চার্জ রেখে নিম্নমানের কয়েল সরবরাহ করে থাকে।

সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্র জানায়, কেউ মশার কয়েল কারখানা করতে হলে একাধিক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। তারমধ্যে ঢাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্লান্ট প্রটেকশন শাখা থেকে পিএসপি অনুমোদন অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ অনুমোদনে কয়েলে কত মাত্রায় কীটনাশক দেয়া হবে তাহা উল্লেখ থাকে।

বর্তমানে উৎপাদিত কয়েলে এস ভায়োথিন, সুমি-১, ডি এলোথ্রিন, সুমেথ্রিন, এজভাইথিং এ জাতের কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কীটনাশকের মান নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। ভৈরবের কারখানাগুলোতে অনুমোদনের বাইরে বেশি মাত্রায় কীটনাশক দিয়ে কয়েল উৎপাদন হয় বলে একাধিক মালিক স্বীকার করেন। কারণ মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক না দিলে মশা মরে না বলে তারা দাবি করেন।

কৃষি বিভাগের মতে কয়েল ব্যবহার মশা তাড়াবার জন্য, মারার জন্য নয়। ভৈরবে কতগুলো বৈধ অবৈধ কয়েল কারখানা আছে তার হিসেব স্থানীয় কৃষি অফিসে নেই বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান। তিনি সোনার বাংলা৭১.কমকেবলেন, এগুলো মনিটরিং করার জন্য আমাকে দেয়া হয়নি। ফলে তদারকি করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ কয়েল কারখানা করলে পিএসপির অনুমোদন ছাড়াও ফায়ার লাইসেন্স, পৌরসভার অনাপত্তি প্রত্যয়নপত্র, পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন, বিএসটিআই অনুমোদন, বাজারজাত লাইসেন্স, ভ্যাট, আয়কর, ট্রেড লাইসেন্স, ট্রেড মার্ক, এসকল সবকিছুরই অনুমোদন নিতে হয়।

ভৈরবের অবৈধ কারখানাগুলো শুধুমাত্র পৌরসভা থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে নকল ও নিম্নমানের কয়েল উৎপাদন করে বাজারজাত করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশি বিদেশি ও চায়নার তৈরি নামি দামি কয়েল কোম্পানির কয়েল নকল করে বাজার বিক্রি করলেও স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এ ব্যাপারে নজর নেই।

ভৈরব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদরুল আলম তালুকদার সোনার বাংলা৭১.কমকে জানান, কেউ অভিযোগ না করলে এ ব্যাপারে আমি ব্যবস্থা নিতে পারি না। নকল কয়েল উৎপাদন হচ্ছে এ ব্যাপারে কোনো কোম্পানির লোক আমার কাছে অভিযোগ করলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ভৈরবের আবেদীন কেমিকেল ওয়ার্কস্ কয়েল কোম্পানির মালিক জয়নাল আবেদীন সোনার বাংলা৭১.কমকে বলেন, সকল অনুমোদন নিয়ে অটো মেশিনে মান নিয়ন্ত্রণ করে আমার কারখানায় কয়েল উৎপাদন করছি। কিন্তু অবৈধ কারখানাগুলোতে নিম্নমানের কয়েল বাজারজাত করায় আমি তাদের সঙ্গে বাজারজাতে টিকতে কঠিন হচ্ছে।

lকিসমত কেমিক্যাল ওয়ার্কস্ কয়েল কোম্পানির মালিক হাজী মজিবুর রহমান মজনু মিয়াসোনার বাংলা৭১.কমকে জানান, পিএসপির অনুমোদনের বাইরে কয়েলে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক না দিলে মশা তাড়ানো কার্যকর হয় না। তিনি বলেন, চায়না থেকে আমদানিকৃত কয়েলে যে পরিমান কীটনাশক দেয়া হয় সে হিসেবেই আমরা রাসায়নিক ব্যবহার করি।

বশির কেমিক্যাল ওয়ার্কস্ এর মালিক সোনার বাংলা৭১.কমকে বলেন, কয়েল কোম্পানি অনুমোদনের জন্য ১১টি সংস্থার লাইসেন্স নিতে হয়। এখানকার ছোট খাট কোম্পানিগুলো এতসব কাগজ যোগাড় না করে অনেকেই অবৈধভাবে কয়েল কারখানা করেছে।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার মো. সাইদুজ্জামান সোনার বাংলা৭১.কমকে জানান, অতিমাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক মিশ্রিত কয়েল মানুষ দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহার করলে শ্বাসকষ্ট, লিভার, কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, মশার কয়েল এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার সোনার বাংলা৭১.কমকে জানান, অবৈধ কয়েল কারখানাগুলোতে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানাসহ শাস্তি দিয়েছেন। তারপরও তারা গোপনে এসব নিম্নমানের কয়েল উৎপাদন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, শীঘ্রই আবার অভিযান চালিয়ে অনুমোদনহীন অবৈধ কয়েল কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিশোরগঞ্জ জেলা সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক শফিকুল ইসলাম সোনার বাংলা৭১.কমকে জানান, ঘটনাটি অবগত হয়ে আমি ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি অনুমোদনহীন অবৈধ কারখানাগুলো খোঁজ নেয়াসহ তালিকা করতে। তিনি বলেন, যত শীঘ্র সম্ভব ভৈরবের অবৈধ কয়েল কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।