থানাকে না জানিয়ে আসামি ধরতে গিয়ে সাসপেন্ড হলেন উপ-পরিদর্শক আমিনুল
প্রকাশিতঃ ২২ মার্চ, ২০২৪
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমিনুল ইসলামকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোহিদুল ইসলাম শুক্রবার সকালে বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, থানাকে অবহিত না করে তিনি একজন আসামিকে আটক করতে যান। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে ওই ঘটনার সময় আলমগীর হোসেন (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আলমগীর রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের চরসীতা গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমলনগর থানার এএসআই আমিনুল ইসলাম কয়েকজন সোর্সকে নিয়ে আলমগীর হোসেন নামে ওই ব্যক্তিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক করে তুলে নিয়ে যান। তিনি কমলনগর থানার দায়িত্বে থাকলেও পার্শ্ববর্তী রামগতি থানাধীন চরসীতা গ্রামে গিয়ে ওই যুবককে আটক করে কমলনগরের ফজুমিয়ারহাট সংলগ্ন একটি নির্জন স্থানে আটক রেখে ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন এবং আলমগীরের স্বজনদের সন্দেহ হলে তারা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে জানতে পারেন- পুলিশ কর্মকর্তা আমিনুল থানার অনুমতি ছাড়াই ওই যুবককে আটক করেছেন। সেখানে এলাকার লোকজনের সঙ্গে এএসআই আমিনুলের ধ্বস্তাধস্তি হয়। এতে তিনি আহত হন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নেন।
এ ঘটনাটি গত ১৯ মার্চ (মঙ্গলবার) রাতের। পরদিন বুধবার (২০ মার্চ) তাকে বরখাস্ত করা হয়।
আলমগীরের স্ত্রী শাহিদা বেগম বলেন, মঙ্গলবার রাত প্রায় ১০টার দিকে আমার স্বামী বাড়ির পাশের একটি দোকান থেকে সদাই কিনতে যান। এ সময় ৪ থেকে ৫ জন লোক তাকে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যান। দোকানে থাকা লোকজন আমাদের বিষয়টি জানায়। পরে আমার স্বামীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে অপরিচিত একজন রিসিভ করেন৷ তিনি আমার স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে কমলনগরের ফজুমিয়ারহাট বাজারে পশ্চিমে যেতে বলেন। আমরা আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে সেখানে গিয়ে তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়। তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বললে টালবাহানা করে এবং আলমগীরকে ছাড়িয়ে নিতে টাকা দাবি করে। এ ফাঁকে ওই স্থানে আরও লোকজন জড়ো হয়। সবার সন্দেহ হলে ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারীদের এলাকার লোকজনের সঙ্গে হাতাহাতি এবং হট্টগোল হয়।
আলমগীরের ভাতিজা মো. রাজু বলেন, আমি আমার চাচার চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হই। দেখি তাকে একটি অটোরিকশায় করে তুলে নেওয়া হচ্ছে। আমি আমার চাচার মোবাইল ফোনে কল দিলে অপরিচিত একজন আমাকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে এসে আমার চাচাকে ছাড়িয়ে নিতে বলে। শুধুমাত্র আমরা দুইজন গিয়ে যাতে ফজুমিয়ারহাট থেকে আমার চাচাকে নিয়ে আসি। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা বেশ কয়েকজন যাই। আমার চাচাকে একটি নির্জন বাগানে রাখা হয়। সেখানে তাদের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ হয়, স্থানীয় লোকজনও চলে আসে। এ সময় লোকজন তাদের উত্তম-মধ্যম দেয়।
রাজু বলেন, তাদের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় আমরা জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯- এ কল দিলে কমলনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
আলমগীরের ভাই হাসেম বলেন, তাদের পরিচয় জানতে আমরা থানার ওসি এবং ডিবি পুলিশের কাছে ফোন দিই। তাদের কোনো টিম অভিযানে ছিল না আমাদের নিশ্চিত করা হয়। পরে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের মারধর করে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এএসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, একজন মাদক ব্যবসায়ী রাস্তায় মাদক বিক্রি করছে- সোর্সের মাধ্যমে এ খবর পেয়ে ওই কারবারিকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করি। ফজুমিয়ারহাট বাজারে পাশে আসলে তাদের লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমার হ্যান্ডক্যাপ, মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আমার ওপর টর্চার করে। আমি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছি।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোহিদুল ইসলাম বলেন, কোনো আসামিকে ধরতে হলে থানার অনুমতি নিয়ে অভিযানে যেতে হয়। কিন্তু এএসআই আমিনুল অনুমতি না নিয়ে আসামি আটক করতে গেছে। এ জন্য তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
আসামিকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই।