মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

নদীর পাড় কেটে সমান

প্রকাশিতঃ ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪  

জেলা প্রতিনিধি,স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ২০২১ সালে সাদুল্লাপুরের বকশীগঞ্জ হাট থেকে লালমাটির ঘাট পর্যন্ত নলেয়া নদী খনন করা হয়। উঁচু করা হয় দুই তীর। সেখানে নেপিয়ার ঘাসসহ বিভিন্ন ধরনের শস্য আবাদ করছেন স্থানীয়রা। এতে নানাভাবে উপকৃত হচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। তবে নদীর উঁচু পাড়ে নজর পড়েছে একটি চক্রের। তারা মাটি কেটে পাড় সমান করে ফেলছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগও।
জানা গেছে, দুই বছর আগে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার ছত্রছায়ায় পাড় কাটা শুরু হয়। সে সময় ধাপেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল কবির মিন্টু বাধা দেন। পরে তৎকালীন ইউএনও রোকসানা বেগম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মাটি কাটা বন্ধ করে দেন। এরই মধ্যে প্রয়াত হয়েছেন শফিকুল কবির। বদলি হয়েছেন রোকসানা বেগমও।
এ সুযোগে ছোট্ট নলেয়া নদীর উঁচু পাড় আবার কাটা শুরু করেছে চক্রটি। উপজেলার ধাপেরহাট ও ভাতগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের মাটি কাটছে তারা। এতে স্থানীয় রাব্বী মিয়া, শাহিন সরকার ও নবীর হোসেনের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তারা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাটি কাটছেন বলে জানা গেছে। ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না নদীতীরের মানুষ। তারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে চক্রটি আবার মাটি কাটা শুরু করেছে।
নদী খননের সময় তীরবর্তী জমিতে যাওয়া মাটি সরিয়ে নিতে মালিকরা আবেদন করেছেন বলে জানান ধাপেরহাট ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন। তাঁর ভাষ্য, যথাযথ কর্তৃপক্ষের পরামর্শে মাটি সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তবে পাড় কাটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। একই কথা বলেন ভাতগ্রামের চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান মাফু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, কয়েক দিন ধরে কেটে নেওয়া হচ্ছে নদীর উঁচু পাড়ের মাটি। এগুলো বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে। এ জন্য আনা হয়েছে ভেকু মেশিন। ট্রাক্টর, ডাম্প ট্রাক ও পাওয়ার ট্রলিতে পরিবহন করা হচ্ছে মাটি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের কাঁচা রাস্তা।
নদীর দুই পাড়ে কৃষকরা নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন জানিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সার্জন আব্দুল্লাহেল কাফী বলেন, এতে নদীর পাড় টেকসই হয়েছে। ঘাস গরুর জন্য পুষ্টিকর খাবার। পাড় কেটে নেওয়ায় গরু খামারিদের সমস্যা হবে। দ্রুত ভরাট হবে নদী।
নলেয়া নদীর উঁচু পাড়ে সরকারিভাবে বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা আছে বলে জানান বন বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা। তবে প্রকল্প গ্রহণ এবং অন্য কারণে বিষয়টি বিলম্ব হচ্ছে জানিয়ে এ কর্মকর্তার ভাষ্য, নদীর উঁচু পাড় কেটে নেওয়া অন্যায় হয়েছে। এতে বৃক্ষরোপণ সম্ভব হবে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
নলেয়া নদী খননের ফলে এলাকায় পানি দূষণ কমেছে বলে জানান স্থানীয়রা। সঙ্গে নাব্যও ফিরেছে। বন্যার সময় ফসলি জমিতে পানি আসেনি। তবে পাড় কেটে নেওয়ায় বর্ষার সময় ফসল ফলানো সম্ভব হবে না। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
নদীতীরের মাটি সরিয়ে কৃষকদের জমি উদ্ধার করে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ী রাব্বী মিয়া, শাহীন সরকার ও নবীর হোসেনের। তারা বলছেন, জমির মালিকরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছে। তবে উপজেলা প্রকৌশলী মো. মেনাজ বলেন, নদীপাড়ের মাটি কাটা ঠিক হয়নি। এতে ভাঙন দেখা দিতে পারে। তাতে তীরবর্তী জমি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নদীপাড়ের মাটি কাটায় দলীয় কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, সরকারি দলের কারও ছত্রছায়ায় পরিবেশের ক্ষতি করলে তা মেনে নেওয়া হবে না। বিএনপি-জামায়াতের লোকজন অন্যায় করে আওয়ামী লীগের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করবে। তাই সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।
থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু কামাল জানান, নলেয়া নদীর পাড় কাটা নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। ইউএনও কাওছার হাবিব বলেন, বিষয়টি দেখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদকে বলা হয়েছে। অন্যায়ভাবে কেউ নদীর পাড় কাটলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।