৬ মাস আগে মৃত তরুণী স্বামীসহ বাড়ি ফিরলেন
প্রকাশিতঃ ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪
জেলা প্রতিনিধি, খুনের শিকার ববিতা(২৬) দীর্ঘ আট মাস পর স্বামীসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পিতার বাড়ি ফিরে এসেছে। শুক্রবার বিকেলে শত শত নারী পুরুষ তাদেরকে দেখার জন্য ভিড় করে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে বুধবার ববিতা তার স্বামী মাজেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে মনাকষায় পিতার বাড়িতে উপস্থিত হয়। উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের খড়িয়াল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ববিতা ওই গ্রামের রসুল আলীর মেয়ে। জানা গেছে- গত বছরের ১১ জুলাই ববিতা নিখোঁজের পর তার পিতা উপজেলার ক্যাপড়াটোলা গ্রামের এনামুল হকের ছেলে রুবেলের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়েরও করেছিল। পরে গত ২৬ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে বস্তাবন্দী একটি মরদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে। সে সময় পিতা রসুল আলী মরদেহটিকে তার মেয়ে ববিতা হিসেবে সনাক্ত করেছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে- গত বছরের ২৬ জুলাই বিকাল সোয়া চারটার দিকে ৯৯৯ নম্বরে কল সুত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পালশা গ্রামের লীলাখেলা মোড়ে বস্তাবন্দী একটি মরদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে সদর থানার এসআই বদিউজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা হয়। যার মামলা নং- ৫২, তারিখ ২৬ জুলাই ২০২৩। মামলার এজাহারে বলা হয়, কে বা কারা গত ১৬-০৭-২০২৩ হতে ২৬-০৭-২০২৩ তারিখের মধ্যে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে সেখানে ফেলে দিয়েছিল।
এ ঘটনায় তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই আফজাল গত বছরের ৯ আগস্ট শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কালিগঞ্জ ক্যাপড়াটোলা গ্রামের এনামুল হকের ছেলে রুবেল হককে (২৮) গ্রেফতার করে জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন। দীর্ঘ ৪০ দিন কারাভোগের পর বর্তমানে রুবেল হক জামিনে মুক্ত আছেন।
মামলাটি এখানো বিচারাধীন। কিন্তু চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারী বুধবার ববিতা স্বামী মাজেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে মনাকষায় তার পিতার বাড়িতে উপস্থিত হলে এলাকায় হৈচৈ পড়ে। তাদেরকে এক নজর দেখার জন্য শত শত নারী পুরুষ ভীড় করছে। এ সময় ববিতা বলেন- প্রায় আট মাস আগে রুবেল আমাকে ফোন করে ডাকলে তার কথা মত মনাকষা হাউসনগর গ্রামে উপস্থিত হই। এ সময় তার সাথে আরো দুজন ছিল। তারা আমাকে নওগাঁয় নিয়ে গিয়ে কোন এক স্থানে শারীরিক নির্যাতন করে। এমনকি ঘুমের ঔষধ খাইয়ে তারা পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে তার স্বামী নওগাঁর মান্দা থানার পরইল কাঞ্চন গ্রামের মৃত আফসার আলীর ছেলে মাজেদ আলী জানান, এক বছর আগে পূর্বের স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে যায়। পরে সাড়ে চার মাস আগে মান্দা এলাকায় একটি অটো গ্যারেজে ববিতাকে পেয়ে বিয়ে করি। বিয়ের সময় তার নাম পিয়া খাতুন। বাড়ি কুড়িগ্রাম বলে পরিচয় দেয় ববিতা। বিয়ের পর তাকে ঢাকা নিয়ে গিয়ে আমি একটি গার্মেন্টেসে চাকুরী করি। এর মাঝে তার অসুস্থতা দেখা দিলে চিকিৎসা করানো হয়। তখন তার পিতার বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য ঠিকানা চাইলে সে কোন ঠিকানা দিতে পারেনি। তবে সে হুমায়ুন রেজা উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতো বলে জানালে গুগলে সার্চ দিয়ে তার ঠিকানা বের করে মনাকষায় তার পিতার বাড়ি নিয়ে আসি। যদিও এলাকাবাসী বলছে, ববিতা আগে থেকেই কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। গত বছরের ১১ জুলাই ববিতার পিতা রসুল আলী কালিগঞ্জ ক্যাপড়াটোলা গ্রামের এনামুল হকের ছেলে রুবেলের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল। রুবেল হকের ভাষ্য- সে সময় মিথ্যা অভিযোগে তাকে থানায় এনে হত্যার দায় স্বীকার করতে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।
তার দাবি- খুন না করেও তিনি হত্যা মামলার আসামি হয়ে ৪০ দিন কারাবন্দী ছিলেন। এটার কী হবে? শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক খাইরুল ইসলাম বলেন, ববিতা ও তার পিতাকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে। তবে শুনেছি সে বিয়ে করেছে এবং প্রায় আট মাস আগে বালিয়াডাঙ্গায় উদ্ধার করা মরদেহ ববিতা বলে তার পিতা দাবি করেছিল।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, মেয়েকে তার পিতার নিকট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পালশা গ্রাম থেকে উদ্ধার করা বস্তাবন্দী মরদেহের ব্যাপারে রুবেলকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছিল। এখন সেই মামলা আবারও তদন্ত করা হবে।