ধনীর দুলালী’র প্রেমে হাসপাতালে কলেজছাত্র
প্রকাশিতঃ ১১ মার্চ, ২০১৬
বগুড়া: গরীব ঘরের সন্তান হয়ে ‘বড়লোকের’ মেয়েকে ভালোবাসার অপরাধে এক কলেজছাত্রকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মাশুল গুনতে হচ্ছে। প্রেমিকার বাবা গরিবের প্রেম মেনে নিতে না পেরে ওই ছাত্রকে পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তার মেয়ের দিকে যেন চোখ তুলে তাকাতে না পারে সেজন্য চোখে গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। এর ফলে ছাত্রটি হারাতে বসেছে ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি।
ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের বারআঞ্জুল গ্রামে।
আহত কলেজছাত্রের নাম হেমেদী হাসান (২০)। তিনি উত্তরবঙ্গের ঐহিত্যবাহী প্রতিষ্ঠার সরকারি আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেহেদীর অর্থাভাবে চিকিৎসাও হচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানায়, শিশু বয়সই মেহেদী হাসান বাবাকে হারান। একমাত্র ছেলেকে মানুষ করতে মা মর্জিনা বেওয়া দিনমজুরের কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। মেহেদী হাসান মাকে সহযোগিতা করতে ও লেখাপড়ার খরচ যোগাতে পড়াশোনার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির কাজও করতেন।
মেহেদী হাসান অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর প্রতিবেশী মামুনুর রশিদের মাদরাসা পড়ুয়া মেয়ের সাথে তার প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান মেহেদী হাসানের ওই ভালোবাসা মেনে নিতে পারেনি স্বচ্ছল ও অবস্থাপন্ন মামুনুর রশিদ। কিন্তু নিজেকে তার কাছ থেকে সরাতে ব্যর্থ হন। তাই হতদরিদ্র মেহেদীকে উচিৎ শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে মামুনুর রশিদ।
গত ৯ মার্চ সন্ধ্যার পর গ্রামের এক মৃত ব্যক্তির জানাজা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন মেহেদী হাসান। পরিকল্পনা মোতাবেক মামুনুর রশিদ পথিমধ্যে তাকে টেনে হেঁচড়ে তার বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর তার মতো বড়লোকের মেয়ের সাথে প্রেম করার অপরাধে মেহেদীর হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ডান পা ভেঙে দেন। শুধু তাই নয়, মাথায় ও চোখে গুরুতর জখম করেন। গ্রামবাসী রাতেই মেহেদীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়।
এদিকে, ঘটনা জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ মামুনুর রশিদের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় মামুনুর রশিদ স্ত্রী-কন্যা নিয়ে প্রতিবেশী একজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে গ্রামের লোকজন ওই বাড়িতেও তাকে ঘেরাও করে। প্রতিবেশীর সহযোগিতায় মামুনুর রশিদের স্ত্রী ও কন্যা অন্যত্র পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। পরে পুলিশ সংবাদ পেয়ে মামুনুর রশিদকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, এ ঘটনায় মেহেদী হাসানের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।