বৃহস্পতিবার ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধ বালু উত্তোলন,রাতভর অভিযানে বালুবোঝাই ট্রাক ওএক্সক্যাভেটর জব্দ

প্রকাশিতঃ ১২ নভেম্বর, ২০২৪  

অপরাধ প্রতিবেদক, নদীর বালুমহাল ইজারা নিয়ে নির্দিষ্ট এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের কথা ছিল ইজারাগ্রহীতাদের। তবে প্রভাব খাটিয়ে নদীর ৩০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে যেখানে বালু আছে, সেখান থেকেই অবৈধভাবে উত্তোলন করছেন প্রভাবশালীরা। এতে নদীর কিছু স্থানে মিলছে না বালু। এ পরিস্থিতিতে পাড় ভেঙে ও তলদেশে ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করে খনিজ বালু উত্তোলন শুরু করেছেন তারা।
এমন অবৈধ কর্মকাণ্ডে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি নদী ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে। ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে আশপাশের অনেক স্থাপনা ও নদীপাড়ের মানুষের বাড়ি-ঘর। উপজেলার নয়াবিল এলাকার মো. মারফত আলী বলেন, নদীর পাড় ভেঙে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুই তীর, পাড়-সংলগ্ন পাহাড় ও গাছপালা। এতে হুমকিতে পড়েছে খলচান্দা ও বুরুঙ্গা গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘর। তিনি জরুরি ভিত্তিতে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান।
বুরুঙ্গা গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেনের ভাষ্য, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চেল্লাখালী থেকে বালু তুলছেন ব্যবসায়ীরা। ইজারার বাইরে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে বসতবাড়ি হুমকিতে পড়েছে। 
এমন পরিস্থিতিতে দুই নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে রাতভর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

গত রোববার রাত ১১টা থেকে পরদিন সোমবার ভোর পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেন ইউএনও এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা।
উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, চলতি বাংলা ১৪৩১ সালের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত উপজেলার ভোগাই নদীর বালুমহালে কালাকুমা, হাতিপাগার, নয়াবিল, ফুলপুর ও মণ্ডলিয়াপাড়া– এ পাঁচটি মৌজায় ৯ একর ৮২ শতাংশ ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর চেল্লাখালী নদীতে ইজারা দেওয়া হয়েছে দুটি ভাগে। এর মধ্যে চেল্লাখালী বালুমহালে বাতকুচি, পলাশীকুড়া, নন্নী, তাজুরাবাদ ও সন্যাসীভিটা মৌজায় ২২ একর জায়গা রয়েছে। নদীর বুরুঙ্গা ও আন্ধারুপাড়া বাইগরপাড়া বালুমহালেও দুটি মৌজায় ১৯ একর ৯ শতাংশ ইজারা দেওয়া হয়েছে।
এ ইজারার আড়ালে অন্যত্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন প্রভাবশালীরা। এর বিরুদ্ধে রোববার রাতে অভিযানের খবর পেয়ে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ড্রেজার যন্ত্র ফেলে আটক এড়াতে নদীর পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কয়েকজন দৌড়ে পালিয়ে যান। অভিযানে ভোগাই নদীর উজানে তিনটি বালুবোঝাই ট্রাক ও একটি এক্সক্যাভেটর (ভেকু) জব্দ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এনে রাখেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টদের হিসাব অনুযায়ী, তিন মাসে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। দু’জনকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপর চারজনকে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। কয়েকটি মিনি ড্রেজার ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ অবস্থায় আছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা বলেন, ইজারাবহির্ভূত এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের অভিযান চলছে। নদীর উজানে বালু উত্তোলন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন ভাটিতে অভিযান শুরু হবে। সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।