সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বিকল্প সড়ক ছাড়াই সেতুর কাজ শুরু

প্রকাশিতঃ ২৩ মার্চ, ২০২৪  

জেলা প্রতিনিধি, বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করেই মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে একটি সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য পুরোনো বেইলি ব্রিজটিও ভাঙা হয়েছে। যে খালের ওপর সেতুটি নির্মিত হচ্ছে, সেই খাল দিয়েও নৌযান যাতায়াত করতে পারছে না। সড়ক যোগাযোগও এখন বন্ধ। ফলে আশপাশের এলাকার হাজারো ব্যবসায়ী, কৃষক ও যাত্রীসাধারণকে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বৌলতলী ইউনিয়নের নওপাড়া-কুসুমপুর সড়কের নওপাড়া এলাকায় পোড়াগঙ্গা খালের ওপর নির্মিত হতে যাচ্ছে ৪৬ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার সেতুটি। ৪ কোটি ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় গত বছর এর কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নায়েব আলী কনস্ট্রাকশন। ওই বছরের নভেম্বরে কাজ শুরু করার কথা ছিল। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের মার্চে। 
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখে গেছে, স্টিলের পুরোনো বেইলি ব্রিজ ভেঙে ফেলা হয়। খাল বন্ধ করে দড়ি টেনে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। মাটি কেটে অল্প জায়গায় খালের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখান দিয়ে নৌকা বা ট্রলার চলাচলের পরিস্থিতি নেই। মানুষের চলাচলের জন্য পাশে বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এখান দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। বিকল্প সড়ক না থাকায় ভারী যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। 

কাজ শুরুর নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মাস দেরিতে চলতি মার্চ মাসে শুরু হয়েছে সেতুটির কাজ। তবে জানুয়ারি থেকেই সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ।  সিরাজদীখানের কুসুমপুর, খিলগাঁও, ইছাপুরা ও শ্রীনগরের কুড়ারবাগ, পানিয়া তন্তুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি বছর আলু উত্তোলন মৌসুমে ২-৩ লাখ বস্তা আলু এনে রাখা হয় লৌহজংয়ের নওপাড়া এলাকার বিভিন্ন হিমাগারে। নওপাড়া-কুসুমপুর সড়ক বন্ধ থাকায় এসব এলাকার আলু পরিবহনে খরচ বেড়েছে। অন্যান্য পণ্য পরিবহনেও ভোগান্তির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

নওপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী গোকুল দত্ত ডেনিস বলেন, দেশের ছোটখাটো যে কোনো সেতু নির্মাণকাজ শুরুর সময় বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এই সড়কে এত মানুষের চলাচল সত্ত্বেও কেন বিকল্প সড়ক রাখা হলো না– তা বুঝতে পারছেন না। অপর ব্যবসায়ী আলমগীর খানের ভাষ্য, ঢাকা থেকে বিভিন্ন পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের এই সড়কটিই ব্যবহার করতে হয়। এখানে রড-সিমেন্ট, টিনসহ বিভিন্ন ভারী পণ্যের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়কটি পুরোপুরি বন্ধ থাকায় সেতুর উত্তর প্রান্তের মালিরঅংক এলাকায় পণ্য আনা-নেওয়া করতে দীর্ঘ পথ ঘুরতে হচ্ছে। 
একই এলাকার আলু চাষি আব্দুর রব বেপারির কাছে জানা যায়, আগে ক্ষেত থেকে এক বস্তা আলু নওপাড়ার হিমাগারে পৌঁছাতে ৩০ টাকা খরচ হতো। সড়ক বন্ধ থাকায় ঘুরে আসতে প্রতি বস্তায় আরও ২০ টাকা খরচ বেড়েছে। 

হিমাগারগুলোতে নওপাড়া বাজারের দক্ষিণ পাশের ১০-১৫টি এলাকা থেকে মৌসুমে অন্তত দুই-তিন লাখ বস্তা আলু আসে। সড়কটি বন্ধ থাকায় চলতি মৌসুমে এসব এলাকার আলু তেমন আসছে না বলে জানান নওপাড়া কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপক এনামুল কবির লিটন। 

নায়েব আলী কনস্ট্রাকশনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল আহমেদ খানের ভাষ্য, ‘এলজিইডি থেকে আমাদের যে ডিজাইন সরবরাহ করা হয়েছে, সেখানে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা নেই।’ কাজ দেরিতে শুরু হওয়ার জন্য স্থানীয়দের অনুরোধ ও বেশ কিছু বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে দেরি হওয়াকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এ নিয়ে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই।’
এলজিইডির লৌহজং উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী ইয়াসিন আহমেদ বলেন, প্রকল্প নেওয়ার সময় উপজেলা মিটিংয়ে তারা বিকল্প সড়কের প্রস্তাবনা রেখেছিলেন। তবে বিষয়টিতে আপত্তি জানান বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যান। এ কারণে বিকল্প সড়ক রাখা হয়নি। ওই কর্মকর্তার এমন্য বক্তব্য পুরোপুরি অস্বীকার করেন বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মালেক সিকদার।