সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

স্কুল-শিক্ষক সবই আছে, নেই শুধু শিক্ষার্থী

প্রকাশিতঃ ০৮ মার্চ, ২০২৪  

জেলা প্রতিনিধি, কথায় আছে ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, কিন্তু গোয়ালে নেই’। বহুল প্রচলিত এ প্রবাদের যেন বাস্তব উদাহরণ চাপারকোনা মনিজা আবুল মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের এ বিদ্যালয়ে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী, আছে অবকাঠামো, আলমারি, চেয়ার-টেবিল ও শিক্ষাসামগ্রী। শুধু নেই কোনো শিক্ষার্থী। তবে বিভিন্ন শ্রেণির হাজিরা খাতায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি।

সরেজমিনে দেখা যায়, এ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী নেই। কিন্তু হাজিরা খাতায় শিক্ষকরা নিয়মিত শিক্ষার্থী উপস্থিতি দেখিয়ে আসছেন। অন্যদিকে নেই শিক্ষক হাজিরা খাতা। পড়ে থেকে শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চগুলোতে জমেছে ধুলোর স্তর। প্রধান শিক্ষকের অফিসও শূন্য। বিদ্যালয়ের মাঠে চেয়ারে বসে খোশ গল্প করছেন শিক্ষকরা। সঙ্গে আছেন পিয়নও। কজন শিক্ষক আবার গিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসে।

স্থানীয় অভিভাবক হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের বাড়ির পাশেই বিদ্যালয়টি। এ স্কুলে শিক্ষার্থীও নেই, লেখাপড়াও নেই। শিক্ষকেরা সারা বছর স্কুলে এসে আড্ডা মারেন। দুপুর পেরোতে না পেরোতেই ছুটি। ২/১ ছাত্রী স্কুলে এলেও কিছুক্ষণ থেকেই চলে যায়। তাই আমার মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। আরেক অভিভাবক হাছেন আলী বলেন, স্কুলের শিক্ষকরা প্রতিদিন স্কুলে এলেও ক্লাস নেন না। আর যে ২/৪ জন ছাত্রী স্কুলে আসে, তারাও কিছুক্ষণ বসে আবার চলে যায়।    

বিদ্যালয়ের জমিদাতা মৃত খোশ মাহমুদ মন্ডলের ছেলে সারোয়ার আলম বলেন, আমরা এক বিঘা জমি দান করেছি এবং অনেক কষ্ট করে বিদ্যালয়টি করেছি। আজ সেই স্কুলের বেহাল দশা। এ বছর একটা ছাত্রীও ভর্তি হয়নি। আর এর জন্য  প্রধান শিক্ষিকা,ম্যানেজিং কমিটি ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকেই দায়ী করবো। 

বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক আবু সাঈদ বলেন, ১৯৮৭ সালে স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষানুরাগী নিজস্ব জমি ও অর্থ দিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৭ সালে ১২ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে এখানে ৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী আছে। তবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নাই বললেই চলে। আরেক শিক্ষক বলেন, প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তির পরপরই  শিক্ষকদের মাঝে অনিয়ম ও অনুপস্থিতি শুরু হয়। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক কিছুই বলেন না, আর সভাপতি তো খোঁজই রাখেন না। 

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জগুরুল ইসলাম মানিক বলেন, বিদ্যালয়ের ভালোমন্দ দেখভাল করার দায়িত্ব শিক্ষকদেরও আছে। এটা দেখার দায়িত্ব মূলত প্রধান শিক্ষকের। তবে বিষয়টি আমি জানলাম, দেখবো।   

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আজমেরি বেগম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো মিথ্যা। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুবই কম। এটি উন্নত করার চেষ্টা করবো। 
সরিষাবাড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, ওই বিদ্যালয় নিয়ে আমার জানা নাই। খোঁজ নিয়ে দেখি কি করা যায়।  

এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দেখবো। অভিযোগ সত্য প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।