আলুর বাম্পার ফলন,দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
প্রকাশিতঃ ২০ জানুয়ারি, ২০২৪
বিশেষ প্রতিবেদক: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় এবার ১০ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু রোপণ করেছেন কৃষকরা। এরমধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। দাম বেশি পেয়ে কৃষকরা আলু তুলতে শুরু করেছে। গত মৌসুমের চেয়ে এ বছর ফলন বেশি।
দুদিন আগে পাইকারি বাজারে জাত ভেদে আলু বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫০-৫২ টাকায়।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৪-২৫ টাকায়। হঠাৎ করে দাম কমে যাওয়ায় আগাম জাতের আলু চাষিরা বেকায়দায় পড়েছে। কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে চাষিরা।চাষিরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আলু চাষাবাদে দ্বিগুণ খরচ বেড়েছে। আবার আলুর ফলনও বেড়েছে। দুদিন আগে যারা আলু উত্তোলন করেছে তারা সবাই লাভের মুখ দেখেছে। কিন্তু বর্তমানে যারা আলু বিক্রি করছেন তারা আর লাভের মুখ দেখছেন না।
চাষাবাদ, সার, বীজ, সেচ ও শ্রমসহ সব খরচ মিলে সমানে সমান হচ্ছে। আবার ২/১ জনের বিঘাপ্রতি ৭/৮ হাজার টাকা লাভ টিকছে। বাজার যদি আরো কমে যায় তাহলে এ লাভ তো দূরের কথা আসল-ই টিকবে না।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) জাত ভেদে প্রতিমন আলু (৪০ কেজি) ২ হাজার থেকে ২১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই আলু গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা মণ দরে।
পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি আলু ২৪-২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে মনপ্রতি আলুর দাম কমে নেমেছে অর্ধেকে। ফলন বাড়লেও দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা।
আলু উৎপাদনে দেশের তৃতীয় বৃহৎ জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট। গত বছরের তুলনায় এবার ২২৫ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ বেশি হয়েছে। বিভিন্ন মাঠে ক্যারেজ, রোমানা, স্ট্রিক, গ্রানোলা, মিউজিকা, ফ্রেশ, ফাটা পাকরি, বটপারকরি, ১২-১৩, সাদা সেভেনসহ হরেক জাতের আলু রোপণ হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের পাশে কালাইয়ের বালাইট মোড়ে হযরত আলি নামে এক কৃষক জমি থেকেই আলু বিক্রি করছিলেন। তিনি বলেন, ‘১০ শতক জমিতে সাদা সেভেন জাতের আগাম আলু রোপণে খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকা। আলু পেয়েছি ১৫ মণ। ১১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছি। লাভ হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। এই আলু দুইদিন আগে বিক্রি করলে লাভ টিকতো ১৯ হাজার টাকা। কাঁচা মালের এই অবস্থা! কাল বেশি তো আজ কম।’
হাতিয়র গ্রামের জালালুদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ১৬৫ শতক জমির ২৪৮ মণ আলু তুলে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করে ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছি। তাতে সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ টিকেছে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। আরো ৮৫ বিঘা জতিতে আলু রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে আলুর দাম নেমেই যাচ্ছে। আলুর বাজার দর এভাবে চলতে থাকলে ফলন যতই বেশি হউক, কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে।’
আলু ব্যবসায়ী আবুল হাসনাত বলেন, ‘বর্তমানে মোকামে চাহিদার তুলনায় বাজারে আগাম জাতের আলুর যোগান বেশি। তাই দাম কম। যোগান কমলেই দাম আবার বাড়বে। কাঁচা বাজারের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। দিনদিন আগাম জাতের আলুর পরিমাণ কমে আসছে। তবে বর্তমান বাজার দর এটা থাকবে না।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় জানান, দিন যতই বাড়তে থাকবে আলুর দাম কিছুটা নিম্নমুখী হবে। তবে প্রতিমন ৭০০-৮০০ টাকার নিচে আসবে না। এতে কৃষকদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে এবং লক্ষ্য মাত্রার অধিক জমিতে আলু চাষ হয়েছে।