নিখোঁজ রিকশাসহ চালক,দুই দিনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ
প্রকাশিতঃ ১০ নভেম্বর, ২০২৩
জেলা প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে দুই দিন ধরে রিকশাসহ খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না এক অটোচালকের। ছেলের সন্ধান না পাওয়ায় দুশ্চিন্তা আর হতাশায় দিন কাটছে বাবা-মায়ের। সন্তানের খোঁজে ঘুরছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারে দ্বারে। নিখোঁজ ওই অটোরিকশা চালকের নাম মো. মুরাদ হোসেন (১৫)। সে সদর উপজেলার তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডস্থ আন্দারমানিক এলাকার আজাদ হোসেন ও মরিয়ম বেগম দম্পতির সন্তান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) রাত ৯ টায় (আনুমানিক) আরবিএম ব্রিকফিল্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে চৌধুরী বাজার যায় মুরাদ। তখন অটোরিকশায় তাঁর বন্ধু সজিবও ছিল। তবে এর কিছুসময় পর থেকেই মুরাদের মোবাইল ফোন বন্ধ। ফিরেনি অটোরিকশা নিয়ে বাড়িতে। দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পরিবার রাতেই বিভিন্ন যায়গায় খোঁজ করে মুরাদের। কিন্তু কোথাও সন্ধান মিলেনি তাঁর। তাছাড়া মুরাদ সম্পর্কে রাতে সজিবও দেয়নি কোন তথ্য।
পরদিন সজিবের সহকর্মী (আরবিএম ব্রিকফিল্ড শ্রমিক) মো. আমিনের কাছ থেকে মুরাদের পরিবার জানতে পারেন। শ্রমিকদের চৌধুরী বাজার রেখে বাড়ি ফিরার পথে মুরাদের মোবাইল ফোনে কল দেয় আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ আবু। তিনি মুরাদকে দক্ষিণ আন্দারমানিক এলাকার আতিক উল্লাহ মাষ্টারের বাড়ির সামনে ভাড়ার কথা বলে ডেকে নেয়। রাত বেশি হওয়ার পরও টাকার লোভে আবুর কথামতো জায়গার উদ্দেশ্যে অটোরিকশা নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে মুরাদ। কিন্তু সজিব তখন আর যায়নি বন্ধুর সঙ্গে। সে পায়ে হেঁটে চলে আসেন নিজ বাড়িতে।
এদিকে, ছেলের খোঁজ পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন মা মরিয়ম বেগম। বুধবার (৮ নভেম্বর) জেলা পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডস্থ আন্দারমানিক গ্রামের মৃত. নুর হোসেনের ছেলে আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ আবু (৫০) ও নুরুল হকের ছেলে দিনমজুর মো. সজিবকে (২০) অভিযুক্ত করেন। তবে ঘটনার পর থেকেই সজিব থাকলেও এলাকায় নেই আবুল কালাম।
মো. ইউসুফ হোসেন বলেন, আবু দীর্ঘদিন থেকেই চুরি ও স্থানীয়দের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতারণা করে আসছে। এসবে একাধিকবার বিচারও হয়েছে তাঁর। তবুও ছাড়েননি খারাপ কাজগুলো।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভাতিজা মুরাদকে ভাড়ার কথা বলে কৌশলে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে নির্জন কোন স্থানে মুরাদকে হত্যা বা গুম করে রেখেছে। আবুকে গ্রেফতার করলেই মুরাদের সন্ধান পাওয়া যাবে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুরাদের বাবা আজাদ হোসেন জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার বিভিন্ন স্থানে খুঁজেছেন। কোথাও খোঁজ পাওয়া যায়নি। খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন এখন। অন্যদিকে ছেলের সন্ধান না পেয়ে ‘পাগল প্রায় মা মরিয়ম বেগম।’ প্রতিটা মুহুর্তে অপেক্ষায় থাকেন কলিজার টুকরো সন্তানের জন্য।
তিনি আরও জানান, যদি ওইদিন রাতে সজিব তথ্য গোপন না করতো, হয়তো সেদিন ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যেতো। তবে কেন, কি কারণে আবু ও মুরাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় থাকার বিষয়টি গোপন করেছিল, সেটি রহস্যজনক। ছেলেকে খুঁজে পেতে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
অভিযুক্ত সজিব হোসেন বলেন, মুরাদের সঙ্গে চৌধুরী বাজার হয়ে দক্ষিণ আন্দারমানিক এলাকার আতিক উল্লাহর বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছি। সেখানে ভাড়ার কথা বলে আবু তাকে ডেকে নেয়। কিন্তু রাত বেশি হওয়ায় পরবর্তী ভাড়ায় মুরাদের সঙ্গে যায়নি। একাই বাড়িতে চলে এসেছি। পরে রাত ১১ টার পর মুরাদের খোঁজ জানতে চাইলে, পুরো ঘটনাটি তাঁর পরিবারকে জানিয়েছি। কোন তথ্যই গোপন করা হয়নি।
আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ আবু মুঠোফোনে জানান, ঘটনার দিন রাত দশটায় তোরাবগঞ্জ বাজারের কাদেরের দোকানের পশ্চিম পাশে মুরাদ অটোরিকশা থেকে তাকে নামিয়ে দেয়। এরপর একটি ছেলে ভাড়ার কথা বলে তাকে নিয়ে যায়। তখন ছেলেটির সঙ্গে রিকশায় দুইজন মেয়েও গিয়েছিলো। তারা কোথায় যাচ্ছে বা গিয়েছিলো তার কিছুই জানেন না তিনি। তবে এখন শুনছেন মুরাদ ওইদিনের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানান, ঘটনাটির সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নয়। জরুরি কাজে এখন ঢাকায় রয়েছেন। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হলে এলাকায় ফিরবেন।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছো। খুব দ্রুত নিখোঁজ মুরাদকে খোঁজে বের করা হবে।