শিশু বিক্রি করে টাকা ভাগ, ২ পুলিশ কর্মকর্তা ক্লোজড
প্রকাশিতঃ ২৮ অক্টোবর, ২০২৩
অপরাধ প্রতিবেদক: যশোরের চৌগাছায় নবজাতক বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। মামলার ভয় দেখিয়ে পুলিশের ঐ দুই কর্মকর্তা নবজাতক বিক্রির ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা হলেন চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক শামিম হোসেন ও আশিক হোসেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ঐ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) তাদের যশোর পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী।
জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের রূপকথার (ছদ্মনাম) স্বামী দুই বছর ধরে ভারতের কারাগারে বন্দি। এ অবস্থায় একই গ্রামের এক তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। ততক্ষণে বিষয়টি উভয়ের পরিবার জেনে যায়। সন্তানকে প্রেমিক মেনে নিলেও তার পরিবার মেনে নেয়নি। এ কারণে গত ২ অক্টোবর নবজাতককে পাশের টেঙ্গুরপুর গ্রামের নিঃসন্তান মুকুল খান ও আশা খান দম্পতির কাছে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।
নবজাতক বিক্রির বিষয়টি চৌগাছা থানার এসআই শামীমকে জানিয়ে দেয় রকি নামে পুলিশের এক স্থানীয় সোর্স। মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন এসআই শামীম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এসআই আশিক হোসেন। বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হলে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিদুল ইসলাম ও এসআই শামীম ঐ যুগলের বিয়ে দিয়ে দেন। একইসঙ্গে লেনদেনের বিষয়ে কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।
ভুক্তভোগী শিশুর বাবা বলেন, পুলিশের চাপের কারণেই শিশুটিকে বিক্রি করেছি। বিবাহবহির্ভূত শিশুর খবর শুনে এসআই শামীম ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। প্রথম দফায় ৩০ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে আরও ২৫ হাজার টাকা নেন এসআই শামীম। এছাড়া রকি পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) স্থানীয় মেম্বারের উপস্থিতিতে এসআই শামীম তাদের বিয়ে দেন।
ভুক্তভোগী রূপকথার শ্বশুর জালাল উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। মাঠে কাজ করে সংসার চালাই। আমার একমাত্র ছেলে না হয় অন্যায় করেছে। সে তো বিয়ে করেছে। এরপরও পুলিশ আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি অনেক হাতে পায়ে ধরে ২৫ হাজার টাকায় রাজি করায়। এরপর গ্রামের একজনের কাছ থেকে ধার করে ১৫ হাজার টাকা মেম্বার মহিদুল ইসলামের কাছে দিয়েছি। তাকে আরও দশ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানায় সে।
এদিকে দত্তক নেওয়া মুকুল খানের বাড়িতে গিয়ে নবজাতককে পাওয়া যায়নি। মুকুল খানের বাবা আব্দুল মান্নানের দাবি শিশুটি অসুস্থ হওয়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য যশোরে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, নিঃসন্তান মুকুল নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে শিশু দত্তক নিয়েছে। যদি ঝামেলা হয় তাহলে তারা শিশুটি ফিরিয়ে দেবে। আর মুকুল খান দাবি করেন, বিবাহবহিভূত বিষয় গোপন রেখেই আমার কাছে সন্তান দত্তক দেন তারা।
ইউপি মেম্বার মহিদুল ইসলাম বলেন, শুনেছি ৭০ হাজারে শিশুটা বিক্রি করা হয়েছে। রকি আমার সঙ্গী হলেও ওর অন্যায়ের দায় আমার না। এরা যদি শিশু ফেরত নিতে চায় সে ক্ষেত্রে আমি সহায়তা করব।
চৌগাছা থানার এসআই শামীম হোসেন বলেন, ঘটনাটি মীমাংসার জন্য আমি সেখানে গিয়েছিলাম। মুকুল আদালত থেকে কাগজপত্র করে শিশুটিকে কিনেছে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, শিশু বিক্রির বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর পুলিশের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, দুই এসআইকে যশোর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তারা এখন যশোরে আছে।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী পরিবার যে অভিযোগ করছে তা মিথ্যা। তারপরও তদন্ত করা হচ্ছে; টাকা লেনদেনের কোনো তথ্য প্রমাণিত হলে জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।