সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

একইসঙ্গে পুকুরে মাছ ও বিদ্যুৎ দুটিই উৎপাদন হচ্ছে

প্রকাশিতঃ ০১ জুন, ২০২৩  

জেলা প্রতিনিধি: একইসঙ্গে পুকুরে মাছ ও বিদ্যুৎ দুটিই উৎপাদন হচ্ছে। দেশের একমাত্র ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুলনপুরের দুটি পুকুরে। এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডেও। বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়া বিদ্যুৎ চাঁপাইনবাবগঞ্জে লোডশেডিং কমাতে ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পটির প্রশংসা করেছেন খোদ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আতাহার এলাকার বুলনপুরে অবস্থিত নবাব অটো রাইস মিল। এই মিলের ভেতরে রয়েছে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৫২টি পুকুর। এর মধ্যে দুটি পুকুরে পরীক্ষামূলকভাবে সম্প্রতি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। নেট মিটারিং পদ্ধতিতে এই প্রকল্পের অংশীদার নবাব অটো রাইস মিল, জুলস পাওয়ার লিমিটেড ও জাতীয় পাওয়ার গ্রিড।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘণ্টায় গড়ে ২ দশমিক ৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রটির দশমিক ৮ মেগাওয়াট (৮০০ কিলোওয়াট) সৌর প্যানেল ভাসমান অবস্থায় স্থাপন করা হয়েছে অটো রাইস মিল মালিকের পুকুরের পানির ওপর। বাকি সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে ওই রাইস মিলের ছাদে। সব মিলিয়ে মোট ১৫০০টিরও বেশি সোলার প্যানেলের ব্যবহার করা হয়েছে। সোমবার (২৯ মে) এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়া শুরু হয়েছে।

জুলস পাওয়ার লিমিটেডের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মোহাম্মদ নাহিদুজ্জামান বলেন, ওপেক্স মডেলের আওতায় অনগ্রিড এই সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। বর্তমানে এখান থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ১০ পয়সা দরে কিনছেন অটো রাইস মিল কর্তৃপক্ষ। কয়েকদিন আগেও এই মিল মালিক বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি নেসকোর কাছ থেকে ১০ টাকা ৬০ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কিনছিলেন। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য তার আড়াই টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতি মাসে উৎপাদিত বিদ্যুতের ইউনিট হিসেবে বিল পরিশোধ করবেন মিল মালিক। এভাবে ১২ বছর ধরে বিল পরিশোধের পর পুরো কেন্দ্রটি বিনামূল্যে ওই ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করা হবে। পানিতে সৌর প্যানেলগুলো এমনভাবে বসানো হয়েছে যেন মাছের স্বাভাবিক জীবনচক্রে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকেও খেয়াল রাখার কথা জানালেন নাহিদুজ্জামান।

নবাব অটো রাইস মিলের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের পুকুরগুলোকে আরও ব্যবহারযোগ্য করার জন্য এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আমরা এখান থেকে কম দামে বিদ্যুৎ কিনতে পারছি। আগামী দিনেও এখান থেকে নিজের বিদ্যুতের চাহিদা নিজেরাই উৎপাদন করে পূরণ করতে পারব। এখানে ৫২টি পুকুর রয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র দুটি পুকুরেই এই সোলার প্যালেন নির্মাণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আরও অন্যসব পুকুরে এই সোলার প্যালেন স্থাপন করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নেসকোর কর্মকর্তা অলিউল আজিম বলেন, নবাব অটো রাইস মিলে সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এই উৎপাদিত বিদ্যুৎ নেট মিটারিং পদ্ধতিতে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। এর মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মানুষের প্রায় দুই মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এই পরিকল্পনাটি যদি আরও বড় আকারে করা যায় তাহলে আরও বেশি উপকার পাবে এখানকার মানুষ।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুলনপুরে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ভাসমান সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২ দশমিক ৩ মেগাওয়াট। প্রকল্পটির ফলে একই জলাশয় থেকে মিলবে মাছ এবং বিদ্যুৎ।