পুলিশ-চোরাকারবারীদের দখলে ট্রেনের ক্যান্টিন
প্রকাশিতঃ ১১ মার্চ, ২০১৬
জেলা প্রতিনিধিঃবাংলাদেশ রেলওয়ে অনিয়ম আর দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য নামে পরিচিত হয়েছে। সরকারি রেলের দুর্নীতি থাকালেও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। তাই রেলওয়েতে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও সেবার মান বিন্দুমাত্র বাড়েনি রেলের। লোহা চুরি, তেল চুরি, টিকিটবিহীন যাত্রীদের সাহয্য করা ও ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। এতে পুরাতন আমল থেকে অদ্যাবধি রেলে দুর্নীতি বিরাজমান রয়েছে। আর হালে যোগ হয়েছে বুফেগার বা খাওয়ার গাড়িতে নিম্নমানের খাওয়ার পরিবেশন।
দুরপাল্লার রেলগাড়ির খাবার ক্যান্টিনে সিটে বসে ১শ ৫০ টাকায় দিনাজপুর থেকে ঢাকা আর ১শ টাকায় পার্বতীপুর থেকে খুলনা যাওয়া যায় অনায়াসে। অবৈধ্য ফেনসিডিল, গাঁজা, হিরোইন ও ইয়াবাসহ অন্যান্য মালামাল স্বল্প ভাড়ায় সহজেই বহন করা যায় খাবার গাড়িতে। মাদকদ্রব্যসহ মূল্যবান মালপত্র ক্যান্টিনের স্টাফরা কিচেন রুমে বহন করে নিরাপদে গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দেয় তারা। আর এ জন্যই মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয় তাদের। খাবার গাড়িতে দুর্নীতির মাধ্যমে যে টাকা আয় হয় সে টাকার ভাগ পান জিআরপি পুলিশ, গার্ড, টিটি, এটেনন্ডেন্সসহ আপাদমস্তক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
যাত্রীদের জন্য খাবার গাড়িতে বসে থাকে চোরকারবারী ও বিনা টিকিটের যাত্রীরা। প্রকাশ্যে টাকা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত থাকে ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত লাইনম্যান। যাত্রীদের নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন না করে গর্ভমেন্ট রেল পুলিশ বা জিআরপি ঘুর ঘুর করে আশেপাশে ভাগ নেয়ার জন্য।
অন্যদিকে, রেলক্যান্টিনে খাবার মান অত্যন্ত নিম্নমানের। প্যাকেজ ভিত্তিক খাবার কোনো মূল্য তালিকা প্রকাশ্যে কোনোখানে টাঙানো নেই। ১ পিস মাংস, ২ প্লেট ভাত ও একটু ডালের দাম ১৩০ টাকা। ২ প্লেট ভাত প্রায়ই ১ প্লেটের সমান। নিম্নমানের রান্না যা খাওয়ার অযোগ্য কিন্তু দামের বেলায় কোনো কমতি নেই। আবার নাস্তায় পাউরুটির স্লাইজে বাসি ও গন্ধযুক্ত খাবার টিস্যু পেপার জরিয়ে যাত্রীদের সামনে পরিবেশন করা হয়। চায়ের দাম ডবলেরও বেশি আদায় করা হয় বলে জানান দিনাজপুরের অন্যতম কাপড় ব্যবসী মো. গুলজার হোসেন।
তিনি আরও জানান, ঠেকায় না পরলে উচ্চমূল্য দিয়ে ওই ধরনের খাবার কেউ কিনে খায় না। না আছে বসার জায়গা আর না আছে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। সিটগুলো ভর্তি সব চোরাচালানি আর পুলিশের ভাড়ায়। দিনাজপুর-ঢাকা, পাবর্তীপুর-খুলনাসহ দেশের প্রতিটি ইন্টারসিটি ট্রেনের খাবার গাড়িতে একই অবস্থা বিরাজমান।
নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছানোর কাজে ব্যস্ত থাকে ক্যান্টিনের স্টাফ। আর ঝুঁকির মধ্যে যাত্রীদের ফেলে জিআরপি পুলিশরা থাকে অবৈধ চাঁদা ওঠাতে। আর সরকার ঘোষণা দিয়ে পালন করে রেলসেবার মাস, বছর কিংবা রেল সেবাসপ্তাহ।