মঙ্গলবার ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সান্তাহারে সংঘর্ষে যুবলীগ সভাপতি নিহত, আটক জাপা নেতা

প্রকাশিতঃ ০৯ জানুয়ারি, ২০১৬  

সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক মালিক-শ্রমিকদের একটি সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া নিয়ে বগুড়ার সান্তাহারে সংঘর্ষে এক যুবলীগ নেতা নিহত হয়েছেন; আহত হন তার ভাইসহ অন্তত ২৫ জন।

সান্তাহারে পরিবহন শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, যুবলীগ নেতা নিহত

শুক্রবার দুপুরে সান্তাহার পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান আদমদীঘি থানার ওসি শওকত মাহমুদ।

সান্তাহার পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে বিরোধও এ সংঘর্ষের অন্যতম কারণ বলছেন স্থানীয়রা।

নিহত শফিকুল ইসলাম (৪২) আদমদীঘি উপজেলার সান্দীরা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে এবং সান্তাহার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।

আহতদের মধ্যে শফিকুলের ভাই বাশেদুল ইসলাম বাদশাকে (৩৬) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সোহাগ নামের এক যুবককে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া সিএনজি অটোরিকশা চালক সমিতির সভাপতি নূর ইসলাম, সজল, শামিম ও মতিউর রহমান টিটুসহ সাতজনকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ও আদমদিঘী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সংঘর্ষ চলাকালে সান্তাহার শহরের এক নম্বর রেলগেট থেকে বিপি স্কুলের মোড় পর্যন্ত ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে।

পরে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ সান্তাহার পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল লতিফকে আটক করেছে।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে আদমদীঘি থানার ওসি শওকত মাহমুদ সোনার বাংলা ৭১.কমকে জানান, সদ্য পৌর নির্বাচনে সান্তাহার পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত শ্রমিক লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম রাজা সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

তার বড় ভাই নুর ইসলাম সান্তাহার সিএনজি মালিক-শ্রমিক সমিতির সভাপতি এবং তাদের অপর দুই ভাই শফিকুল ইসলাম ও বাদশা মিয়া ওই সমিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত বলে জানান তিনি।

এদিকে উপজেলা জাতীয় পাটির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস হাসান সুমন সান্তাহার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

ওসি জানান, বেশ কিছুদিন ধরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা সমিতির লোকজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে তাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নেতাদের চাপ দিয়ে আসছিলেন।

“এনিয়ে দুই সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বিরোধ বাধে।”

বৃহস্পতিবার সিএনজি অটোরিকশার শ্রমিকরা বেশকিছু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভাংচুর করে বলে জানান ওসি।

এর জের ধরে শুক্রবার সকাল থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সমিতি ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা পাল্টা বেশকিছু সিএনজি অটোরিকশা ভাংচুর করলে দুপক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয় বলে জানান ওসি।

“জুম্মার নামাজের কিছু আগে শহরের সিএসডির গেটের সামনে দুপক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস শেল ও বেশকিছু রাবার বুলেট ছোড়ে বলে জানান ওসি।

আহত বাদশা মিয়া

আহত বাদশা মিয়া
ওসি জানান, আহতদের মধ্যে শফিকুলকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন এবং আশংকাজনক অবস্থায় বাদশাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এদিকে শফিকুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত শ্রমিকরা পৌর জাতীয় পাটির কার্যালয়, আদমদীঘি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এন এইচ মিলন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সাধারণ সম্পাদক সুমনের বাড়ি, অটোরিকশা সমিতির কার্যালয়সহ কয়েকটি বাড়ি ও অফিসে অগ্নিসংযোগ করে বলে জানান ওসি।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি বলে জানান তিনি।

সোনার বাংলা ৭১.কমকে বলেন, “এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল লতিফকে আটক করা হয়েছে।”

নিহত শফিকুলের ভাই সান্তাহার পৌর মেয়র প্রার্থী শ্রমিক লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম রাজা বলেন, “আমার নির্বাচনে দাঁড়ানোই কাল হলো। এ কারণে আমি আমার ভাইকে হারালাম।”

আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু খান ডটকমকে বলেন, পৌর নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিএনপির মেয়র প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টুর পক্ষে সরাসরি কাজ করেছে।

“এ কারণেই দুপক্ষের সংঘর্ষ হলেও সামনে আনা হয়েছে অটোরিকশার দুই সংগঠনের বিরোধকে।”

আদমদীঘি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এন এইচ মিলন ও সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস হাসান সুমনের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।